ঠিকঠাক ঘুম হচ্ছে না? তাহলে কিন্তু হারাতে পারেন বাবা-মা হওয়ার সুযোগ

বর্তমানে আমাদের কাজের ব্যস্ততা আমাদের স্বাস্থ্যকে যেমন প্রভাবিত করে, ঠিক সেভাবেই অনিয়মিত জীবনযাপনও আমাদের নানান শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ওজন, অস্বাস্থ্যকর ডায়েট, ধূমপান, মদ্যপান এবং ব্যায়ামের অভাব আমাদের শারীরিক ক্ষমতাকে হ্রাস করার পাশাপাশি আমাদের মানসিক অবস্থারও অবনতি করে। বর্তমানে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে অনিয়মিত ঘুমও ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং প্রজনন ক্ষমতার ওপর।

এইচটি লাইফস্টাইল (HT Lifestyle)-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে মাদারহুড ফার্টিলিটি এবং আইভিএফ (Motherhood Fertility and IVF) বিশেষজ্ঞ ড: শ্রুতি এন মানে বলছেন যে, বর্তমান যুগের কাজের সময়ের সার্কাডিয়ান ছন্দ আমাদের সাধারণ সার্কাডিয়ান ছন্দের থেকে অনেক আলাদা। তিনি বলেন সার্কাডিয়ান ছন্দ হল আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি, যখন আমাদের শরীর অন্ধকার এবং আলোর একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্নের সংস্পর্শে আসে তখন সঠিকভাবে কাজ করে। কিন্তু তার মতে বর্তমান সময়ে কাজের শিফট এই প্যাটার্নের সঙ্গে অসামঞ্জ্যপূর্ণ, ফলে তা বিরূপ প্রভাব ফেলছে মানুষের শরীর এবং প্রজনন ক্ষমতার উপর। এই সূত্রে তিনি বলেছেন দীর্ঘদিন ঘুমের ব্যাঘাত নারী ও পুরুষ উভয়েরই প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন যে, নারী এবং পুরুষের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের একই অঞ্চলে ঘুম এবং জাগ্রততার সঙ্গে সম্পর্কিত হরমোনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ হয় (কর্টিসল এবং মেলাটোনিন)। এগুলি প্রজননের সঙ্গে জড়িত হরমোনগুলিকেও সক্রিয় করে। এই হরমোনগুলি শুক্রাণুর পরিপক্কতা বা ডিম্বস্ফোটনকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রজননের ক্ষেত্রে কম ঘুম যে সমস্যা সৃষ্টি করে সেগুলি হল মাসিকের অনিয়ম, ডিসমেনোরিয়া, গর্ভধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যা, গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং কম ওজনের শিশুর জন্ম।

এছাড়াও তিনি জানান ঘুমের ব্যাঘাত হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-অ্যাড্রেনাল-অ্যাড্রেনাল অক্ষ সক্রিয় করার মাধ্যমে প্রজননকে প্রভাবিত করে, যেমন প্রজেস্টেরন নিঃসরণে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়, ঘুমের অভাব স্ট্রেস বৃদ্ধি করে যা প্রজনন অঙ্গগুলির বৃদ্ধি হ্রাস করে এবং ডিম্বাশয় এবং ফলিকল আকারকে প্রভাবিত করে। তিনি আরও বলেন যে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অনিয়মিত ঘুম এবং অপর্যাপ্ত ঘুম কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধির করে। এই কর্টিসলের বৃদ্ধি মহিলাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের ভারসাম্যকে ব্যাহত করে যার ফলে মাসিক এবং ডিম্বস্ফোটন সমস্যা হয়। আবার পুরুষদের মধ্যে কর্টিসলের বৃদ্ধি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার ফলে স্পার্মাটোজেনেসিস কমে যায়।

তিনি আরও বলেন যে মেলাটোনিন নামে একটি হরমোনের কথা। এই মেলাটোনিন, অন্ধকারে শরীর দ্বারা উৎপাদিত একটি হরমোন। তিনি জানান যে এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, যা ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর গুণমান রক্ষা করতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুম ও অন্ধকার পরিবেশে ঘুমনোর জন্য তিনি সকলকে সচেতন করেছেন।