‘পোশাক শিল্পের সংকট দ্রুতই কেটে যাবে’

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, ‘২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এজন্য বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেকনোলজির ব্যবহারও বাড়ছে কারখানাগুলোতে। সবাই বর্তমানের সংকট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন; সে বিষয়ে আমি বলবো— এ সংকট সাময়িক। এটি দ্রুতই কেটে যাবে।’

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ভোরের কাগজ ও দ্যা অ্যাপারেল নিউজের যৌথ উদ্যোগে ‘পোশাক শিল্পের সাম্প্রতিক সংকট: সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

পোশাক শিল্পে ২০২৩ সাল ভালো যাবে না, এটা সবারই জানা ছিল উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো পৃথিবীকে এক নতুন বাস্তবতায় দাঁড় করিয়েছে। তবে ২০২২ সাল দেশের পোশাক খাতের জন্য অনেক ভালো কেটেছে। ২০২৩ সাল যে খারাপ সেটি বলবো না। কারণ পোশাক রফতানির বড় দেশগুলো সবাই খারাপ করেছে। বাংলাদেশ কোনও মতে ভালো অবস্থান কিছুটা হলেও ধরে রেখেছে। গর্ব করার মতোও অনেক কিছু আছে। বিশ্বের ১০ গ্রিন পোশাক কারখানার ৯টিই বাংলাদেশের।’

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এজন্য বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেকনোলজির ব্যবহারও বাড়ছে কারখানাগুলোতে। সবাই বর্তমানের সংকট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, সে বিষয়ে আমি বলবো— এ সংকট সাময়িক। এটি দ্রুতই কেটে যাবে। কিছুদিন আগে একটি পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছিল যে, ১২টি দেশ থেকে বাংলাদেশের পোশাক প্রত্যাহার করা হয়েছে। যা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।‘

বিশ্বে কৃত্রিম সুতার পোশাকের চাহিদা বাড়ছে বলে জানান ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এটি আমাদের আমদানি করতে হয়। এই জায়গাটিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। পাশাপাশি রিসাইকেল নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস সময়ের পরিসংখ্যান নিট পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। অর্থ্যাৎ অন্যদের চেয়ে আমরা ভালো করছি। ভবিষ্যতেও করবো। এজন্য ১৫ বছরের রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ভার্চুয়াল মার্কেট ও কৃত্রিম সুতায় জোর দেওয়া হয়েছে।’

বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড অ্যাক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘যারা এনজিও-এর নামে বিদেশি টাকা আনার কৌশল এঁটেছেন, তারাই তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছে বাংলাদেশের পোশাক খাতকে খারাপভাবে উপস্থাপন করছেন। এটি স্পষ্ট করে বলতে চাই— শ্রম অধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ নাই। এরপরও যদি রাজনৈতিক কারণে কেউ নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেটি সরকার কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। এটা স্পষ্ট করা জরুরি- নিষেধাজ্ঞা দিলে পোশাক খাতে কোনও প্রভাব পড়বে না।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সভাপতিত্বে এবং দ্যা অ্যাপরেল নিউজের সম্পাদক ও প্রকাশক অমিত কে. বিশ্বাসের সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সাবেক সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন, আইটিইটির (বাংলাদেশ) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের বিজনেস স্টাজি অনুষদের অধ্যাপক ড. সুবোধ দেবনাথ, মাসকো গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এটিএম মাহবুবুল আলম চৌধুরী, বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান (ট্রেড ফেয়ার) মো. কামাল উদ্দিন ও বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুকসানা আক্তার প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে কি-নোট উপস্থাপন করেন এস্কয়ার নিট কম্পোজিট লিমিটেডের (বাংলাদেশ) চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার দেবাশীষ কুমার সাহা।