কম দামে গরুর মাংস পেয়ে ক্রেতাদের স্বস্তি

দীর্ঘদিন গরুর মাংসের দাম ছিল মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। ৭৫০ থেকে ৮০০ কেজি মাংস কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছিল না। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য গত ৭ ডিসেম্বর থেকে গরুর মাংসের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয় কেজি প্রতি ৬৫০ টাকা ধরে। মাংসের দাম কমায় যেমন বিক্রি বেড়েছে, তেমনি স্বস্তি ফিরে এসেছে ক্রেতাদের মাঝে।

শুক্রবার ( ২২ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, শুক্রাবাদ ও কাওরানবাজার এলাকার কাঁচাবাজারে মাংসের দোকানে ঘুরে দেখা যায়, আজ ছুটির দিন সকাল থেকেই মাংসের দোকানগুলোতে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। নির্ধারিত দামে মাংসে পেয়ে হাসিমুখেই বাসায় ফিরছেন লোকজন।

কামরুল ইসলাম একজন বেসরকারি চাকরিজীবী রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা। সকালে শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারে আসেন বাজার করতে। তার সঙ্গে কথা হয় শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারের আল্লাহর দান মাংস বিতান সামনে। তিনি বলেন, মাংস কম দামে কিনতে পারছি। আগে যেটা ৭৫০ টাকায় কিনতাম এখন পাচ্ছি ১০০ টাকা কমে। আমি বলবো এটি আমাদের জন্য ভালো খবর। সামনে যেন এমন দামই থাকে।

আরেকজন ক্রেতা খলিলুর রহমান ( ৫১)। রাজধানীর ঢাকায় ঠিকাদারি কাজ করেন। রাজধানীতে তিনি একা থাকলেও পরিবার থাকেন জামালপুরে। মাংস কম দাম পাওয়ায় একসঙ্গে পাঁচ কেজি মাংস নিলেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও ৭৫০ টাকা কেজি দরে মাংস কিনেছি। এখন আরও কম দামে পাচ্ছি। তাই একসঙ্গে পাঁচ কেজি নিলাম। বর্তমান দাম ঠিক আছে, আর না বাড়লেই হলো।

প্রাইভেটকার চালক তানভির হাসান বলেন, গরুর মাংসের দাম কমার পর আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ও অল্প আয়ের মানুষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসছে। তবে আমরা যেটি শুনেছি এ দাম এক মাসের জন্য করা হয়েছে। আমি বলবো, সবসময়ের জন্যই দাম কমানো উচিত। 

শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারের মাংস ব্যবসায়ী আল্লাহর দান মাংস বিতানের মালিক মো. মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাংসের দাম কমায় দোকানে আগের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের সমিতি থেকে আপাতত এক মাসের জন্য নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে বলেছে। পরে সামনে দাম আরও কমতেও পারে।

তার পাশের দোকানের মাংস ব্যবসায়ী জনপ্রিয় গোস্ত বিপণি নুরুজ্জামান রনির বক্তব্যও একই রকম। তিনি বলেন, সাইনবোর্ড লাগিয়ে ৬৫০ কেজি দরে মাংস বিক্রি করছি। আগের চেয়ে বর্তমানে ক্রেতাদের সাড়া পাচ্ছি।

এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর  মাংস উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) ও বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির এক সভায়  এক মাসের জন্য গরুর মাংসের নতুন দাম নির্ধারণ করে। সভায় জানানো হয়েছিল, প্রতি কেজি গরুর মাংসে ৭৫০ গ্রাম মাংস, ২০০ গ্রাম হাড় ও ৫০ গ্রাম চর্বি থাকবে। এছাড়া রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রি করা যাবে না। এই এক মাস পরীক্ষামূলকভাবে মাংস বিক্রির পর আবার মূল্য সমন্বয় করা হবে। এছাড়া নতুন নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়নে তদারকি বাড়ানোর প্রস্তাব জানানো হয়।

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মর্তুজা মন্টু বলেন, রাজধানীতে নতুন নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হলে এরপর সারা দেশে তা বাস্তবায়ন করার জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সরকারের কাছেও আমাদের কিছু দাবি রয়েছে। সেগুলো আমরা প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করবো।