শেষ দিনের প্রচারণায় জয়ের আশা প্রার্থীদের, ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি)। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শেষ হচ্ছে নির্বাচনি প্রচার। ফলে শেষ দিনের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। রাজধানীর বিভিন্ন সংসদীয় এলাকায় বড় ধরনের শোডাউন করে নিজের জয়ের ব্যাপারে আশার কথা বলেছেন তারা। সেই সঙ্গে ভোটারদের কেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রার্থীরা।

ঢাকার আসনগুলো ঘুরে দেখা যায়, এবারের নির্বাচনে দুই ডজনের বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দলটির প্রার্থীদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) অন্য দলগুলোর প্রার্থীরা সক্রিয় থাকলেও প্রচারণায় নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে কোথাও বাধা দেওয়ার তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এখনও ঢাকার সড়কে, দেয়ালে ঝুলছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনি পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড ঝুলছে। অন্যান্য দিনের মতো এদিন নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং করে ভোট চাইতে দেখা গেছে অলি-গলিতে। বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী ও তাদের লোকজনদের লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করতেও দেখা গেছে। এ ছাড়া ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে পোস্টারিং, মাইকিং, লিফলেট বিতরণের ক্ষেত্রে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর সূচনা কমিটি সেন্টারে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘স্বপ্নপুরী কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি সংগঠন। এতে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনে নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক। পরে তিনি ঢাকা-১৩ আসনে অবস্থিত সকল এনজিও, ক্লাব ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাতে মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্পে বিহারী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নানক। সেখানে তিনি বিহারীদের নানা ধরনের সমস্যার কথা শুনেন এবং নির্বাচিত হলে এ সকল সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। এ সময় বিহারী ক্যাম্পে নির্বাচন উৎসব লক্ষ্য করা গেছে।

এদিন জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। বিএনপি-জামায়াত গত ১৫ বছর ধরে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছে। তবে দেশের জনগণ তাদের সঙ্গে নেই বলেই বারবার তারা ব্যর্থ হয়েছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখেও তারা ষড়যন্ত্র করছে। তবে বিএনপির নির্বাচন প্রতিহতের যে ষড়যন্ত্র তাও ব্যর্থ হবে। ভোটকেন্দ্রে জনগণের ঢেউয়ে তাদের ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল হয়ে যাবে। নির্বাচনপূর্ব যেসব সহিংসতা হচ্ছে তা যৎসামান্য। তবে কোনও ধরণের সহিংসতাই কাম্য নয়। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। শেষ দিনের প্রচারণায় জয়ের আশা প্রার্থীদের, ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান

এদিন সকালে মতিঝিলে গণসংযোগ করেন ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি নটরডেম কলেজের প্রিন্সিপাল ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিওর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং নটরডেম কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে কনফারেন্স রুমে মতবিনিময় করেন। পরবর্তীতে তিনি মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাঙ্গণ থেকে জাতীয় শ্রমিক লীগের উদ্যোগে শ্রমিক-কর্মচারী জমায়েত ও নির্বাচনি প্রচারণা,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি  অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় সভা, মতিঝিল টিএন্ডটি স্কুল ও  কলেজ মাঠে জনসভা ও বুয়েটের শিক্ষক ও কর্মচারীদের সাথে গণসংযোগ, পুরানা পল্টন প্রতিবেশী নিরাপত্তা কমিটির সাথে মতবিনিময় সভা করেন।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী হলো ঢাকা এবং ঢাকার হার্ট (হৃদয়) হচ্ছে ঢাকা-৮ আসন। এ ঢাকা-৮ আসনকে জনগণকে সাথে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলবো।

তিনি বলেন, ঢাকা-৮ আসনের নাগরিকদের কিছু অসুবিধা রয়েছে। গ্যাস, পানিসহ নানা বিষয়ে ভোগান্তিতে রয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে  সিটি করপোরেশনের মেয়রের সাথে সমন্বয় করে তাদের জন্য কাজ করবো। আমি চেষ্টা করবো এ এলাকা পরিষ্কার, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত করার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে শিক্ষার পরিবেশ ঠিক থাকে তার জন্য আমি চেষ্টা করবো। কোনও প্রকার দুর্নীতিকে আমরা ছাড় দেবো না। আমায় একটু সময় দিলে আমি তাদের সকল সমস্যা দূর করবো ইনশাল্লাহ। শেষ দিনের প্রচারণায় জয়ের আশা প্রার্থীদের, ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান

এদিকে, বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে গণসংযোগ ও মিছিল শুরু করেন ঢাকা-৬ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। কর্মসূচির শুরুতেই সুসজ্জিত ঘোড়ায় চড়েন তিনি। সাঈদ খোকন জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেন এবং নৌকা প্রতীকে ভোট চান। মিছিলটি সূত্রাপুরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় হাতি, ঘোড়ার গাড়ি, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বর্ণাঢ্য মিছিলে দলীয় হাজারো নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। তারা নৌকা প্রতীক এবং সাঈদ খোকনের পক্ষে স্লোগান দেন। ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

পরে মিছিলটি বংশালের ইংলিশ রোড হয়ে নর্থ-সাউথ রোডে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে জনগণের সুখ-দুঃখের কথা জাতীয় সংসদে তুলে ধরার মাধ্যমে নাগরিকদের খেদমত করবো, ইনশাআল্লাহ। ৭ জানুয়ারি আমরা নিজেরা ভোট দেবো, আমাদের পরিবারের সদস্যদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাবো। ওইদিন বিকালে আল্লাহ যদি সহায় হোন তাহলে আমরা নেত্রীর হাতে বিজয় তুলে দেবো, ইনশাআল্লাহ।

অন্যদিকে, দুপুরে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টর মাঠ থেকে রোডশো’র মাধ্যমে বিশাল শোডাউন করেন ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের। এদিন বিকালে কদমতলী থানার জাতীয় পার্টির ও সহ‌যো‌গী সংগঠনের সমাবেশে বালুর মাঠ শিল্প  এলাকায় লাঙ্গ‌লের পক্ষে ‌ভোট প্রার্থনা ক‌রে ‌দলটির কো-চেয়ারম্যান ও আসনটির প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। শেষ দিনের প্রচারণায় জয়ের আশা প্রার্থীদের, ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান

শেরীফা কাদের বলেন, নির্বাচিত হলে ঢাকা-১৮ আসনকে মডেল হিসেবে তৈরি করবো। ঢাকা-১৮ আসনে নাগরিকদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করবো। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবো। সুয়ারেজ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করবো। লাঙ্গল বিজয়ী হলে আর রাস্তা-ঘাটের দুরবস্থা থাকবে না, মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবে সাধারণ মানুষ। আমরা মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করবো।

তিনি বলেন, মানুষের সেবা করতেই আমাদের রাজনীতি। আমরা শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করবো। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে কাজ করবো। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগে বড় একটি হাসপাতাল নির্মাণে কাজ করবো। বেকারত্ব দূর করতে কারিগরি ইনস্টিটিউট নির্মাণ করে কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করবো। আল্লাহর উপর ভরসা করে নির্বাচনে নেমেছি। আজীবন সাধারণ মানুষের সাথেই ছিলাম, সুখে-দুঃখে সাধারণ মানুষের সাথেই থাকবো।