Attacks on Ships to impact Indian Export: সাগরে পরপর জাহাজে হামলা, ৩০০০ কোটি ডলারের রফতানি কমতে পারে ভারতের

সম্প্রতি ভারত ও আফ্রিকার উপকূলের মাঝামাঝি স্থানে সাগরে লিবিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজ অপহরণ করে নিয়েছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। সেই জাহাজে ছিলেন ১৫ জন ভারতীয়। ভারতীয় নৌসেনা গিয়ে সেই ১৫ ভারতীয়কে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এর আগেও সাম্প্রতিককালে একাধিকবার আরব সাগর, লোহিত সাগর ও ভারতীয় মহাসাগরে একাধিক ভারতগামী জাহাজ হামলার শিকার হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে হুথি জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার শিকার হয়েছে ভারতগামী জাহাজ। যা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। এই আবহে এই রুটে জাহাজ পাঠাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে রফতানিকারকরা। এর জেরে ৩০০০ কোটি ডলার মূল্যের রফতানি কমতে পারে ভারতের। এমনই দাবি করা হচ্ছে রিপোর্টে। (আরও পড়ুন: মলদ্বীপ বিতর্কের মাঝেই লাক্ষাদ্বীপে প্রকল্প শুরু ইজরায়েলের, সঙ্গে চলল ‘প্রচার’)

নয়া দিল্লি ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গতবছর ভারতের রফতানি ছিল মোট ৪৫১ বিলিয়ন ডলারের। এই আবহে গত ২০২৩ সালের তুলনায় এই বছর সংখ্যাটা ৬ থেকে ৭ শতাংশ কম হতে পারে। লোহিত সাগর অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান আক্রমণের জেরেই এই নিম্নমুখী গ্রাফ দেখা যেতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয়েছে থিঙ্কট্যাঙ্কের রিপোর্টে। থিঙ্কট্যাঙ্কের ডিরেক্টর সচিন চতুর্বেদী বলেন, ‘লোহিত সাগরের এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে ভারতের বাণিজ্যের ওপর। এর জেরে আগামীতে ভারতের রফতানির পরিমাণ কমতে পারে’। যদিও সরকার এখনও এই সব হামলার জেরে কোনও ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি।

এদিকে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সাম্প্রতিককালে আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে পাঁচটি রণতরী মোতায়েন করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। পেন্টাগনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে ইয়েমেনের হুথিরা ১০০টিরও বেশি ড্রোন উড়িয়ে ১০টি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের আবহে ইজরায়েল যোগ থাকা জাহাজের ওপরে এই হামলা চালানো হচ্ছে। তবে এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে ভারতগামী একাধিক জাহাজ। আইএনএস কলকাতা, আইএনএস কোচি, আইএনএস মরমুগাওঁ, আইএনএস বিশাখাপত্তনম এবং আইএনএস চেন্নাইকে মোতায়েন করা হয়েছে সমুদ্রে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, আইএনএস কলকাতা লোহিত সাগরের মুখে পৌঁছে গিয়েছে। আইএনএস কোচি আছে উত্তর আরব সাগর অঞ্চলে টহল দিচ্ছে। আইএনএস বিশাখাপত্তনমও উত্তর আরব সাগরে আছে। এদিকে আইনএস কোচি ইয়েমেনের সোকোট্রা দ্বীপের দক্ষিণে নজরদারি চালাচ্ছে। এবং আইএনএস চেন্নাই এবং আইএনস মরমুগাওঁ পশ্চিম আরব সাগর অঞ্চলে ঘুরছে। এই রণতরীগুলোতে আছে ব্রহ্মোস মিসাইল। এছাড়া ভারতীয় রণতরী থেকে বিমান উড়ে গিয়েও বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ওপর নজরদারি চালাতে শুরু করেছে। এদিকে এই রণতরীগুলি যাতে সবসময় সাগরে থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে ২৫ হাজার টনের ট্যাঙ্কারের সাহায্যে। ‘স্বর্ণমালা’ নামক ট্যাঙ্কারটি আপাতত ভাড়ায় নিয়ে রেখেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। সেই ট্যাঙ্কারই জ্বালানি সরবরাহ করছে আরব সাগরে মোতায়েন থাকা ভারতীয় রণতরীগুলিকে।

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই গুজরাট থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটায় দূরে ড্রোন হামলার শিকার হয়েছিল একটি জাহাজ। সেই জাহাজটির নাম ছিল ‘এমভি কেম প্লুটো’। সেই জাহাজে ২০ জন ভারতীয় নাবিক ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। অবশ্য কেউ সেই হামলায় হতাহত হননি। তবে জাহাজের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী ট্যাংকারটির সাথে ইজরায়েল যোগ রয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে সম্প্রতি আরও একটি জাহাজে হামলা চালানো হয় লোহিত সাগরে। জানা গিয়েছে, সেই জাহাজে ছিল অশোধিত জ্বালানি তেল। সেই জাহাজে ২৫ জন ভারতীয় ক্রু ছিলেন বলে জানায় ভারতীয় নৌবাহিনী। জাহাজটির নাম – এমভি সাইবাবা।

এর কয়েকদিন আগে মালটার পতাকাবাহী ‘এমভি রয়েন’ নামক একটি জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই সময় সাহায্যের আর্তি জানিয়েছিল তারা। এই ঘটনাটি ঘটেছিল আরব সাগরে। জাহাজটি ভারতেই আসছিল। সেই জাহাজের আর্তিতে সাড়া দিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনী সেখানে গিয়ে পৌঁছায় এবং জলদস্যুদের হামলা বানচাল করে দেয়। আর তার আগে তুরস্ক থেকে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করা পণ্যবাহী জাহাজ হাইজ্যাক করা হয়েছিল লোহিত সাগরে। ইয়েমেনের জঙ্গি গোষ্ঠী হুথি সেই ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল। বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৫ জন নাগরিক সেই জাহাজে ছিল। অপহৃত জাহাজটির নাম ‘গ্যালাক্সি লিডার’।