কয়েকদিন আগেই সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের ওপর চড়াও হয়েছিল রেশন দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত শাহজাহান আলির অনুগামীরা। এতে মাথা ফেটেছিল তিন ইডি আধিকারিকের। এই আবহে শহরে এসেছেন তদন্তকারী সংস্থার ডিরেক্টর রাহুল নবীন। মঙ্গলবার তিনি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন রাজ্যপালের সঙ্গে। এরপরই রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজিকে রাজভবনে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল। রাজ্যের কাছ থেকে রেশন দুর্নীতি মামলার বিস্তারিত রিপোর্ট নিয়ে আসত বলা হয় এই তিনজনকে। উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। এর আগে রাজ্য়পাল সিভি আনন্দ বোসের প্রধান সচিব ছিলেন তিনি। সেই সময় রাজ্যপাল নানাভাবে তাঁর উপর কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এনিয়ে রাজ্য় প্রশাসনের অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। (আরও পড়ুন: ‘নিজের ছেলেকে খুন করে…’, AI সংস্থার CEO সূচনাকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি পুলিশের)
আরও পড়ুন: ‘রেলে চাকরির বদলে জমি’ মামলায় ধাক্কা খেলেন লালু,ইডির চার্জশিটে নাম স্ত্রী-কন্যার
এর আগে সন্দেশখালি নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস জানিয়েছিলেন, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশকে রাজ্যপাল নির্দেশ দিয়েছেন অবিলম্বে শেখ শাহজানানকে গ্রেফতার করতে। কিন্তু কোথায় এখন শাহজাহান? এই আবহে রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘আমি সমস্ত ঘটনার উপর নজর রাখছি এবং নিজে বিশ্লেষণ করছি। সঠিক সময়ে আপনাদের জানাব।’ এদিকে এই বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কী কথা হয়েছে, তা যথাসময়ে আমি প্রকাশ্যে আনব। আমরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছি।’
এদিকে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের ভিত্তিতে ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছিল ন্যাজাট থানায়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওয়ারেন্ট ছাড়াই শেখ শাহজাহানের বাড়ির তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন ইডি আধিকারিকরা। এদিকে ইডির অভিযোগের প্রেক্ষিতেও পৃথক এফআইআর হয়েছে। শাহজাহান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে হয়েছে সেই এফআইআর। রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি রাজীব কুমার ও বসিরহাট পুলিশ জেলার এসপি জোবি থমাসের কাছে ইমেলের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েছে ইডি। সেই অভিযোগে ইডি অবশ্য উল্লেখ করেছে, কোর্ট ওয়ারেন্ট নিয়েই শুক্রবার শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিলেন আধিকারিকরা। এছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আরও একটি মামলা রুজু করেছে ন্যাজাট থানার পুলিশ। সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা, ভাঙচুর ও সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে সেই মামলা রুজু করা হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি কী ঘটেছিল? সকালে ইডির আধিকারিকরা যখন শাহজাহানের বাড়িতে পৌঁছন, তখন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। শেখ শাহজাহানের দেখা মেলেনি। ইডির অফিসাররা ও সিআরপিএফ-এর জওয়ানরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দরজা খুলতে বলেছিলেন। কিন্তু এসবের মধ্যেই মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে এক দল উন্মত্ত জনতা লাঠি নিয়ে এসে ইডি আধিকারিকদের ঘিরে ফেলেন। ইডির দাবি, প্রায় ৮০০-১০০০ জনের উন্মত্ত জনতা চড়াও হয়েছিল তদন্তকারী দলের উপর। আক্রান্ত হয়েছেন ইডির অফিসাররা। ইডির তিন জন অফিসার হাসপাতালে ভরতি। এদিকে হামলার দায় পালটা ইডির উপরেই চাপিয়েছে বাংলার শাসক শিবির। তৃণমূলের মুখপাত্র থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রীদের দাবি, অভিযানের ব্যাপারে ইডি আগাম কোনও তথ্য দেয়নি। তথ্য দিলে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা থাকত। আর তাতে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হত না।