Red Ant Chutney Why Got GI Tag Know About Its Nutrients And Recipe

কলকাতা: একবার কামড় খেলে ব্যথায় কঁকিয়ে উঠতে হয়। পিঁপড়ের সঙ্গে গড়পড়তা বাঙালির পরিচয়টা কিছুটা এমনই। মশার মতো বরাবরই পিঁপড়ে আমাদের ‘মিনি’ শত্রুর লিস্টে। এই প্রাণীর জ্বালায় বাড়িতে খাবারদাবার বাঁচিয়ে রাখা দায়। একে তাড়াতে বিষাক্ত চকের জোগান রাখতে হয়। এমনকি এর কামড় খেলে কখনও কখনও ওষুধ লাগাতে হয় ক্ষতস্থানে। ডেঁয়ো পিপড়েকে কমবেশি সকলেই ভয় পান। কিন্তু সে প্রাণীটাকেই যদি শিলনোড়ায় বেটে চচ্চড়ি করে খেতে বলা হয়? প্রথম প্রথম অনেকেই নাক সিঁটকাবেন। তবে একবার জিভে ঠেকালে নাকি আহা-বাহ করা ছাড়া গতি নেই। হ্যাঁ, স্বাদের দিক থেকে নাকি এতটাই অতুলনীয় লাল পিঁপড়ে। বেঁটে রেঁধে দিব্যি চেটেপুটে খাওয়া যায়। তাও আবার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লাল পিঁপড়েটাই। যার কামড়ের ব্যথা সহজে ভোলা যায় না। আদিবাসী উপজাতিদের মধ্যে এই পিঁপড়ের পদ খাওয়ার চল বহুদিন ধরেই রয়েছে। শুধু তাই নয়, এবার সেই রেসিপিকে স্বীকৃতি দিল দেশের সরকারি মন্ত্রক। জিআই ট্যাগ পেল লাল পিঁপড়ের মুখরোচক চাটনি (Red Ant Chutney)। সরকারের খাতায় অবশ্য এর নাম সিমিলিপাল কাই চাটনি (Simipal Kai Chutney)।

ওড়িশার উপজাতি গোষ্ঠীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এই বিশেষ রেসিপির চল রয়েছে। ২০২০ সালে এই রেসিপি যাতে জিআই ট্য়াগ পায়, তার জন্য আবেদন করা হয় সরকারি দফতরে। তারই  স্বীকৃতি এল চলতি বছর শুরু হতে না হতেই। ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি অফিস অব কন্ট্রোলার জেনারেল অব পেটেন্টস, ডিজাইনস ও ট্রেডমার্কস এই খাবারটিকে জিআই ট্যাগ দেয় (GI tag)। স্বীকৃতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে এই খাবারের পুষ্টিগুণের কথাও। কীভাবে বানাতে হয় এই লাল পিঁপড়ের চাটনি ? কতটাই বা এর পুষ্টিগুণ? কী বলছেন পুষ্টিবিদ – সবটাই বিশদে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে।

পিঁপড়ের ঠিকুজি-কুষ্ঠী

এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বায়োরিজার্ভ ওড়িশার শিমিলিপাল অরণ্যে গেলে দেখা মিলবে এই বিশেষ পিঁপড়ের। লেখার শুরুতেই যা বলা হয়েছিল – কামড়ালে ফুলে ঢোল হয়ে যায়। জিআই ট্যাগের সরকারি নথিপত্রও তাতে সায় দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, পিঁপড়ে প্রজাতির অন্যতম ভয়ঙ্কর প্রজাতি এই লাল ডেঁয়ো সাইজের পিঁপড়ে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Oecophylla smaragdina। 

কীভাবে আবেদন?

ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ ও কেওনঝড় জেলার আদিবাসী উপজাতিদের মধ্যে এটি একটি বিখ্যাত পদ। বারিপদার ময়ুরভঞ্জ কাই সোসাইটি প্রথম এই বিষয়টি নিয়ে ভাবে। খাবারটিকে বিশেষ স্বীকৃতি এনে দিতে উদ্যোগ নেয় এই সোসাইটি। কাই সোসাইটির কাই নামটি কিন্তু ওই চাটনিকেই ইঙ্গিত করে। গোটা আবেদন প্রক্রিয়ায় সোসাইটিকে সাহায্য করেছে ওড়িশা ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি। পিঁপড়ের চাটনির নান খুঁটিনাটি দিক নিয়ে তাদের গবেষণা জিআই ট্যাগ পেতে সাহায্য করেছে।

কী এর পুষ্টিগুণ এর মধ্যে?

জিআই ট্যাগের স্বীকৃতিপত্রের আগে ২০২৩ সালের ৩১ অগস্ট আবেদনের সব তথ্য দিয়ে একটি নথি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। তাতেও হদিশ রয়েছে এই সবকটি পুষ্টিগুণের। গবেষণাকেন্দ্রে এটি বিশ্লেষণ করে মোট কুড়িরকম প্রোটিন পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও, এর উপাদান হিসেবে হদিশ মিলেছে ক্রুড প্রোটিন, ক্রুড ফ্যাট ও ক্রুড ফাইবারের। এই পদে রয়েছে ভিটামিন A,D,E ও বেশ কিছু জরুরি খনিজ পদার্থ। এছাড়াও, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রনের মতো জরুরি পদার্থ পাওয়া যাবে এই চাটনি থেকে। কার্বোহাইড্রেট থাকলেও তার পরিমাণ নেহাতই কম। 

এই চাটনি খেলে কী কী উপকার?

মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ময়ুরভঞ্জ ও কেওনঝড়ের উপজাতি বাসিন্দারা এই চাটনি বেশ কয়েকটি কারণে খেয়ে থাকেন। তার মধ্যে জটিল সব রোগও রয়েছে।

  • সর্দি কমাতে এটি খাওয়ার চল রয়েছে তাদের মধ্যে।
  • হুপিং কাশির সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। সেটি কমাতও নাকি কার্যকরী এই চাটনি।
  • খিদে চাগাড় দিচ্ছে না ? চাটনির গুণে চরচরিয়ে খিদে পাবে।
  • চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে লাল পিঁপড়ের এই সুস্বাদু পদ।
  • যৌবনের শক্তি কমে গেলেও এই চাটনি বাতলে দেয় সমাধানের পথ।
  • এটি খেলে পেটের সমস্যাতেও ভুগতে হয় না। কারণ এটিই পেটে ব্যথার ওষুধ হিসেবে প্রচলিত।
  • মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটাতেও সমান কার্যকরী পিঁপড়ের চাটনি।
  • এছাড়াও, মানসিক অবসাদ কমায়।
  • শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে তা সারিয়ে দিতে পারে। এবং
  • বয়সকালে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ার রোগও ঠেকিয়ে রাখে পিঁপড়ের মুখরোচক পদ।

কী বলছেন পুষ্টিবিদ?

নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান পদ্মজা নন্দী দুটি দিক তুলে ধরলেন এই বিশেষ পদের। তাঁর কথায়, ‘লাল পিঁপড়ে দিয়ে রান্না বলে অনেকই হয়তো নাক সিঁটকোবেন। কিন্তু আদিবাসী এলাকায় সহজে প্রোটিনজাতীয় খাবার পৌঁছায় না। আবার অনেক সময় সেখানে মাছ, মাংস, মুরগির দামও যথেষ্ট বেশি থাকে। সেই প্রোটিনের ঘাটতি অনেকটাই মিটিয়ে দিচ্ছে এই চাটনি। এর মধ্যে প্রোটিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনিশিয়ামের মতো উপাদানও থাকছে। যা হাড় ও হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে বিশেষভাবে দরকার।’ 

অন্যদিকে চিকিৎসকের কথায়, ‘বর্তমানে সারা বিশ্বের অনেকেই ভেগান হওয়ার দিকে ঝুঁকছেন। ভারতেও এই ঝোঁক রয়েছে। সাধারণত, মুরগি, পাঁঠা, গরুর মতো বড় প্রাণীর ক্ষেত্রে বাতাসে অনেকটা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেন নির্গত হয়। এতে পরিবেশের প্রভূত ক্ষতি হয়। পরিবেশবিদরা এই নিয়েও সরব হচ্ছে। লাল পিঁপড়ের চাটনির ক্ষেত্রে কিন্তু সেই সমস্যা কম।’

লাল পিঁপড়ের চাটনির রেসিপি

  • এটি তৈরি করতে প্রথমে লাল পিঁপড়ে ও তাদের ডিম সংগ্রহ করা হয়।
  • সংগ্রহ করার পর সেগুলি একটি জলভরা বালতিতে রাখা হয়। 
  • এবার তার থেকে পাতা ও অন্যান্য ময়লা সাফ করা হয়।
  • চাটনি তৈরি করতে মূলত লার্ভা ও জোয়ান পিঁপড়েকেই বেছে নেওয়া হয়।
  • বেছে নেওয়া পিঁপড়েগুলি শিলনোড়ায় ভাল করে বাটা হয়।
  • এবার এর মধ্যে ধনেপাতা, রসুন ও আদাবাটা দিয়ে মাখা হয়।
  • চাইলে এর মধ্যে গোলমরিচ গুঁড়োও দেওয়া যেতে পারে।
  • স্বাদ বাড়াতে এর মধ্যে সামান্য গরম জল মেশানো হয়।
  • এবার সব উপকরণ ভালভাবে মিশিয়ে নিলেই তৈরি লাল পিঁপড়ের চাটনি।

ভাত বা রুটির সঙ্গে লাল পিঁপড়ের চাটনি সার্ভ করতে পারেন। পরিমাণ এক চামচ। 

লাল পিঁপড়েই যখন জীবিকা!

শুধু খাওয়া নয়, এই চাটনি বিক্রি করে ওই দুই জেলার অনেকেরই সংসার চলে। জিআই নথিতেও উল্লেখ করা হয়েছে স্থানীয় বাজারেও এই বিশেষ পদটির খ্যাতির কথা।পদটি পুরোপুরি কোনও রাসায়নিক ছাড়াই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। এর পর শালপাতায় মুড়িয়ে বিক্রি করা হয় বাজারে। ওড়িশায় তো খ্যাতি অনেক আগে থেকেই ছিল, এবার জাতীয় স্তরেও স্বীকৃতি ছিনিয়ে নিল লাল পিঁপড়ে থুড়ি লাল পিঁপড়ের চাটনি।

তথ্যসূত্র: অফিস অব কন্ট্রোলার জেনারেল অব পেটেন্টস,ডিজাইন, 

ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অব ইন্ডিয়া, 

এবিপি লাইভ

আরও পড়ুুন: Foods and cancer risk: বাঙালির প্রিয় কোন খাবারে লুকিয়ে ক্যানসারের সূত্র ? কোনটাই বা ঠেকায় মারণরোগ ?

Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )

Calculate The Age Through Age Calculator