বর্ষাতি দুর্নীতিতে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছেন মেয়র, অফিসারদের শোকজ করবে পুরসভা

বর্ষাতি দুর্নীতি নিয়ে এবার কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কারণ তাঁর নির্দেশ অমান্য করেই এই বর্ষাতি কেনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। টেন্ডার ডাকা ছাড়াই স্কুলপড়ুয়াদের জন্য প্রায় ৭৪ লক্ষ টাকার বর্ষাতি কেনা হয় বলে অভিযোগ। যা জানতে পেরে নিষেধ করেছিলেন খোদ মেয়র। তারপরও এটা ঘটেছে। আর সেই ঘটনার খবর কেন মেয়রের কাছে ছিল না?‌ এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ৬ বছর আগের এই ঘটনায় তখন যাঁরা পুরসভা শিক্ষা বিভাগের অফিসার ছিলেন তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কলকাতা পুরসভায় টেন্ডার ছাড়া বর্ষাতি কেলেঙ্কারির জন্য যাঁরা সংশ্লিষ্ট ফাইলে সই করেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে ফাইল সামনে নিয়ে এসে দেখা গিয়েছে তখন মেয়র পারিষদ (‌শিক্ষা)‌ পদে ছিলেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। এখন তিনি রাস্তার মেয়র পারিষদ। ওই ফাইলে তাঁরই সই আছে। ওনাকেও শোকজ করা হবে তো?‌ উঠছে প্রশ্ন। যদি তা হয় তাহলে বাকি অফিসারদেরও করতে হবে। আর তখনই গোটা বিষয়টি নিয়ে ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। এই নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভায়। কারণ অন্যান্য দফতরে যাঁরা অফিসার আছেন তাঁদের বক্তব্য, ‘মেয়র ফাইলের উপরে ‘নো’ লিখে দেওয়া সত্ত্বেও কেমন করে লক্ষাধিক টাকার বর্ষাতি কেনা হল? এই দায় তো তখনকার মেয়র পারিষদ (শিক্ষা)–কে নিতে হবে।’

অন্যদিকে একটি অডিট রিপোর্ট সামনে এসেছে। যেটা দেখতে পেয়েছেন খোদ মেয়র বলে সূত্রের খবর। সেখানে উঠে এসেছে, বর্ষাতি কেনার ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম মানা হয়নি। টেন্ডার ছাড়াই একটি বিশেষ সংস্থাকে এই বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে কলকাতা পুরসভার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য বর্ষাতি কেনার ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতর যে দরপত্রের প্রক্রিয়া করে, তাতে বিস্তর অসঙ্গতি ছিল। তাই পুরসভার অর্থ দফতর তাতে অনুমোদন দেয়নি। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে ওই ফাইল পাঠালে মেয়র ফাইলের উপরে ‘নো’ লিখে দেন। তার পরেও পুরসভার শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে ৭৩ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকার মূল্যের ২২০৪০টি বর্ষাতি কেনা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন:‌ কর্পূরের মতো উবে যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই, বেস্ট সেলারের পথে এগোচ্ছেন মমতা

এছাড়া কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে অন্ধকারে রেখে এই গোটা কাজ করা হয়েছিল সেটার প্রমাণ মিলেছে। এই বিষয়টি জানতে পেরে বেজায় চটেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মেয়রের স্পষ্ট কথা, ‘দুর্নীতিকে কোনও অবস্থাতেই বরদাস্ত করব না। আমি এসবের শেষ দেখে ছাড়ব।’ একাধিকবার সাংবাদিক বৈঠকে এই কথা বলেছেন মেয়র। আর তারই উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন। মেয়রের উদ্যোগে অনেকে ভয় পাচ্ছেন। কারণ যদি শোকজ করা হয় তার জবাব দেওয়া কঠিন। আর জবাব দিতে না পারলে চাকরি নিয়ে টানাটানি অবশ্যম্ভাবী। এই বিষয়ে পুরসভার এক অফিসার বলেন, ‘যাঁরা যাঁরা ফাইলে সই করেছিলেন, তাঁদের সবাইকে শোকজ করা হবে।’‌