হাস্যকর ও আইওয়াশ বললেন হাইকোর্ট

রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে করা সুপারিশকে হাস্যকর ও আইওয়াশ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

শুনানিকালে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতকে পড়ে শোনান রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

ওই প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটির চারটি সুপারিশ উঠে আসে। সেগুলো হলো- এক. হাসপাতালে একাধিক এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া; দুই. রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনকে এনেসথেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকিসমূহ ভালোভাবে অবহিত করা; তিন. হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা; এবং চার. সরকারের অনুমোদনের পরে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা।

এসব সুপারিশ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেন, এসব সুপারিশ হাস্যকর এবং আইওয়াশ। দায় এড়ানোর জন্যই এ ধরনের সুপারিশ দিয়েছে। সুন্নতে খাৎনা করার সময় যে পরিমাণ ওষুধ লাগিয়েছে তাতে একজন রোগীর হার্টের বাইপাসেও এতো ওষুধ লাগে না।

আদালত আরও বলেন, আমাদের ১৮ কোটির দেশে অপ্রতুলতা আছে তবে ডিসিপ্লিনে আসা উচিত। চিকিৎসা অবহেলা একটু গুরুতর অপরাধ। আমরা চাচ্ছি এ জন্য একটি কোর্ট বা টিম গঠন করে দিতে। যেন এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। আমরা এ বিষয়ে আদেশ দিতে চাই। আপনি (রিটকারী আইনজীবী) একটি সম্পূরক আবেদন দিন। আমাদের অনেক পড়াশোনার দরকার রয়েছে। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের দিন নির্ধারণ করা হলো।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।

১৫ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপ-পরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল এ জমা দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়ান ‌চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য আয়ানকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া লাগতো। সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।

শিশু আয়ানের অপারেশনের সময় স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয় মর্মেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।

এর আগে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

রিটে শিশু আয়ানের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের ডাক্তারী সনদ বাতিল ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। গত ৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ইউনাইটেড গ্রুপের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এ পর্যন্ত কত রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়। এছাড়াও দেশের সব সরকার অনুমোদিত ও অননুমোদিত হাসপাতাল-ক্লিনিকের তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

গত ১৫ জানুয়ারি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর বাড্ডা মাদানী অ্যাভিনিউয়ের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ানকে নিয়ে আসেন বাবা শামীম আহমেদ। সেখানে তাকে অস্ত্রোপচার পূর্ববর্তী এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়।

পরে গত ৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১১টা ২০ মিনিটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে। এই হাসপাতালের পিআইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল শিশু আয়ান।

জানা গেছে, শিশুটিকে এনেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন ডা. সাব্বির আহমেদ। সার্জারি করেন ডা. মেহজাবীন।