পথচারীর অপেক্ষায় কুমিল্লার মহাসড়কে ১৬ ফুটওভার ব্রিজ!

লোহার পাতগুলোতে মরিচা পড়েছে, সিঁড়িতে মাটির আস্তর, পাশে জন্মেছে ঘাস; এমন চিত্রই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৬টি ফুটওভার ব্রিজে। এগুলোর বেশিরভাগই ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধে ব্যবহার অনুপযোগী। ঝুলছে বড় বড় ব্যানার পোস্টার। যে কয়েকটি দিয়ে পথচারীর চলাচল আছে, সেগুলোতে আবার ভিক্ষুক আর হকারের দৌরাত্ম্য। ফলে ক্রমেই সেগুলোতেও বিমুখ হচ্ছেন পথচারীরা। এরফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই সড়ক পারাপার হচ্ছেন লোকজন, ঘটছে দুর্ঘটনাও।

সড়ক ও জনপদ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত এই মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ ১০৫ কিলোমিটার। এই ১০৫ কিলোমিটারে সময়ের প্রয়োজনে ও সাধারণ মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৬টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। যেগুলোর হাতে গোনা কয়েকটি নিয়মিত ব্যবহার হচ্ছে। বাকিগুলোতে তেমন পথচারীর দেখা নেই। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে ব্যানার পোস্টার, ধুলোবালি, অনিরাপত্তা, ছোট আকারের সিঁড়ি, ভিক্ষুকদের উৎপাত, হকারদের দখল করা, বৈদ্যুতিক তার ঝুলে থাকা, বখাটেদের উৎপাতসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ফুটওভার ব্রিজগুলো ঘুরে বেশিরভাগ ব্রিজেই ব্যানার-পোস্টার দেখা গেছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের, স্কুল, কলেজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্টার ব্যানার ঝুলে আছে এসব ফুটওভার ব্রিজে।

কুমিল্লা অংশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ফুটওভার ব্রিজের একটি পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায়। তবে এটি বেশিরভাগ সময়ে থাকে হকার ও ভিক্ষুকের দখলে। পথচারীদের মনোযোগ কাড়তে তারা সিঁড়ির ঠিক মাঝ বরাবর বসে। এতে করে পথচারীদের হাঁটতেও বেগ পেতে হয়। কিছু ভিক্ষুক পথচারীদের চলার পথে পা ধরে বসেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন অনেকে। তাই ঝুঁকি নিয়ে নিচ দিয়েই রাস্তায় পার হন অনেকেই। আবার ছোট আকারের সিঁড়ির কারণে অনেকের পা পিছলে যাওয়ার ভয় থাকে।

যেসব ব্রিজ দিয়ে পথচারী চলাচল আছে, সেগুলোও থাকে ভিক্ষুক ও হকারদের দখলে (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মহাসড়ক পার হচ্ছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম নামে একজন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় এই ব্যক্তির। নিচ দিয়ে সড়ক পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে পঞ্চাশোর্ধ্ব রফিক জানান, তিনি প্রায়শই মেয়েকে দেখতে তার শ্বশুর বাড়িতে আসেন। কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্রিজের সিঁড়ি অনেক খাড়া। একটানা উঠলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। পরে নামাটাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই একটু দেখেশুনে হাতের ইশারা দিয়েই সড়ক পার হন তিনি।

চৌদ্দগ্রাম বাজারের পার্শ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের সামনে ও এইচ জে সরকারি পাইলট মডেল হাই স্কুলের ফটক। দুই প্রতিষ্ঠানের ফটকের দূরত্ব ৪০০ হাত। অথচ দুই প্রতিষ্ঠানের সামনেই আছে ফুটওভার ব্রিজ এবং দুটি ব্রিজেই পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে। কুমিল্লার চান্দিনা বাজার, দাউদকান্দি বাস স্ট্যান্ডসহ প্রায় সব এলাকার ফুটওভার ব্রিজের একই অবস্থা।

সব ফুটওভার ব্রিজ ছেঁয়ে আছে পোস্টারে (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

চৌদ্দগ্রাম ফুটওভার ব্রিজের পার্শ্ববর্তী এক ব্যবসায়ী বলেন, এসব ব্রিজে তেমন কেউ ওঠে না। রাতে বখাটেরা আড্ডা দেয়, অনেকসময় দিনেও আড্ডা দেয়। কারণ এসব ব্রিজের ওপরে কি হচ্ছে তা নীচ থেকে বোঝার উপায় নেই। আশপাশে ব্যানার দিয়ে ঢাকা। 

পদুয়ার বাজার এলাকা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত লালমাইয়ের সজিব মাহমুদের। তিনি বলেন, ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িগুলো খাড়া। আমরা ইয়াং মানুষ, তাও যে কষ্ট হয়; আর যারা বয়স্ক তাদের কী অবস্থা! এই ফুটওভার ব্রিজের নোয়াখালীগামী সড়কের ডান পাশের সিঁড়িগুলো ব্যবহার করা মুশকিল। একেতো বাঁকা, তার ওপর একটির ওপর আরেকটি করা। এটা ভয়ানক। যেকোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

কোনও কোনও ব্রিজের সিঁড়ির সামনে এমন ময়লার স্তুপ (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

সড়ক ও জনপদ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ভূঁঞা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ফুটওভার ব্রিজের জন্য আলাদা কোনও লোক নেই, আমাদেরই দেখতে হয়। আমরা কয়েকটি রঙ করেছি, বাকিগুলোও রুটিন মতো করা হবে। সেগুলো আমাদের নজরে আছে।’