Intermittent Fasting For Weight loss new trend is it helpful to everyone health benefit disadvantage

নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা :  না-খেয়ে থাকবেন না। সারাদিন খান, অল্প-অল্প করে খান। এই পদ্ধতিতে বিশ্বাস করেন বহু চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদ। কিন্তু এখন বহু তারকা-মহাতারকা থেকে আমআদমি, শরীর ফিট রাখতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে দিনে একটা বড় সময় পেটে তালা-চাবি দিয়ে রাখেন। আর সেটা একটা লম্বা সময় । মোটামুটি ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ! কেউ কেউ আবার এই নিয়মটাই মানেন একটু অন্যভাবে। সপ্তাহের ২ থেকে আড়াই দিন কিচ্ছুটি খান না। অবাক হচ্ছেন? স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান ভারতী সিং থেকে অভিনেত্রী-সাংসদ স্মৃতি ইরানি, এমনকী মালাইকাও নাকি দিনে বহু ঘণ্টা কিচ্ছু না খেয়ে থাকেন ! ইন্টারনেট ঘাঁটলে বেরিয়ে আসে এমন নানা তথ্য। শুধু বলিউডি সেলেব্রিটিরা নন, এই সাময়িক উপোসে ভরসা রাখেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। 

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক সূত্র সানডে টাইমসকে জানিয়েছে, ঋষি সুনাক প্রতি সপ্তাহের শুরুতে প্রায় দু-দিন কিছু খান না। রবিবার বিকেল ৫ টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৫ টা পর্যন্ত শুধুমাত্র জল,চা বা ব্ল্যাক কফি খেয়ে থাকেন । এটাও তো একধরনের ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (Intermittent fasting ) !  বিবিসির স্বাস্থ্য সম্পাদক হিউ পিমকে সুনাক জানান, তাঁর চিনিযুক্ত খাবারের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। এতে লাভ একটাই সপ্তাহের শুরুতে নিজেকে এই সব খাবার থেকে সরিয়ে রেখে,  সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে  পছন্দের সব মিষ্টি বা চিনি দেওয়া খাবার খেতে পারেন। 

উপোস করা । পুজোআচ্চা-ব্রত-পার্বণে না খেয়ে ভগবানকে আরাধনা করার রীতি বহু পুরনো। বিভিন্ন ধর্মেই রয়েছে নানারকমের উপবাস করার রীতি। আগেকার দিনে অনেকসময়ই দেখা যেত, কেউ কোনও নির্দিষ্ট বারে উপবাস রাখেন, কেউ বা শুধু পানীয় খেয়েই কাটান সপ্তাহের বিশেষ কোনও দিন। কোনও না কোনও দেবদেবীকে উৎসর্গ করে মানুষ এইসব উপবাস রাখতেন। এখনও যে উপোস-তাপাস করার রীতি কেউ মানেন না, এমনটা নয় কিন্তু। কিন্তু এই উপোস করা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ মনে করেন এভাবে না-খেয়ে থাকাটা ক্ষতিকর। কেউ আবার মনে করেন সপ্তাহে একটা-দুটো দিন খাবারে বিরতি দেওয়া ভালই। 

ইদানিংকালে, ফের ফিরে এসেছে উপবাস করার রীতি। তবে সবসময় যে তার ধর্মীয় উপলক্ষ থাকছে এমনটা নয়। নিজের শরীর স্বাস্থ্য ভাল রাখতেই বহু মানুষই সপ্তাহের বিশেষ কয়েকটা দিন অথবা রোজই  নির্দিষ্ট  লম্বা একটা সময় উপোস রাখেন। সেটাকেই বলে ইন্টারমিটেন্ট ডায়েট । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিনের মধ্যে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। বাকি সময়ে খেতে হয় শরীরের চাহিদামতো খাবার। অর্থাৎ কারও শরীরের যতটা ক্যালরি দরকার, ততটা খাবার খেতে হবে ওই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই। বাকি সময়টা সলিড কিছুই খাওয়া যাবে না। এই ডায়েট করার পদ্ধতিকে বলা হয় ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। 

এবার এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা ভাল না মন্দ? সত্যিই কতটা লাভ, কাদের লাভ, কারা একেবারেই ফলো করবেন না এই ডায়েট এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকরা।   এবিপি লাইভের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, চিকিৎসক কুমারদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (Assistant professor department of General medicine), ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ড. অনন্যা ভৌমিক, পুষ্টিবিদ ও সহকারী অধ্যাপক অরিত্র খাঁ।  

চিকিৎসক কুমারদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ‘উপবাস করলে, সেই সময়টায় শরীর শক্তির উৎস হিসেবে সঞ্চিত চর্বি ব্যবহার করে। এর ফলে ওজন হ্রাস হয়। একটা সময় বাড়ির মা-ঠাকুমারা বিভিন্ন পুজো বা ব্রত উপলক্ষে উপোস করতেন। বা মুসলিমদের রোজা রাখার বিষয়টিও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। আসলে এসব কিছুর পিছনেই একটা বিজ্ঞান আছে। আর সেই বৈজ্ঞানিক কারণটাই আধুনিক যুগে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের ব্যাখ্যা। সাধারণ ভাবে ধরে নেওয়া হয়, দিনের ৭-৮ ঘণ্টা একজন ঘুমান। সেই সময় তিনি কিছু খান না। এই সময়টার আগুপিছু আরও কযেকঘণ্টা , মোটামুটি ১২ ঘণ্টা মতো সময় উপবাস রাখতে হয় এই ফাস্টিং-রেগুলেশনে। তাহলে বাকি সময়টা কি না-খেয়ে থাকতে হবে ? না। এই সময় চা, জল, ব্ল্যাক কফি খাওয়া যাবে। তবে সলিড কিছু নয়। 

কারা কারা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করবেন, চিকিৎসক কুমারদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন,

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কাদের করার পরামর্শ দেওয়া হয়?

ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ড. অনন্যা ভৌমিক জানালেন, এই ডায়েট-প্যাটার্নেরও আবার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। তবে সাধারণত টানা ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা না খেয়ে থাকা, প্রতি সপ্তাহে এক বা দুই দিন না খেয়ে থাকা বা দৈনিক খাওয়াকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেঁধে রাখা (সাধারণত ৮-১০ ঘন্টা) কে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বলে।  

এর উপকারিতাগুলো কী কী 

  •  ওজন নিয়ন্ত্রণ: এই ধরনের উপবাস ওজন হ্রাস বা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি। আপনি সারাদিনে যত ঘন্টা খাচ্ছেন তা নিয়ন্ত্রণ করে সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণ কমানো যায়। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে বা ফ্যাট বার্ন করতে সহায়তা করে। 
  • Insulin Sensitivity বা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা: IF ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে। এই ধরনের ডায়েট করলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।  টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ।
  • কোষের মেরামতি এবং অটোফ্যাজি ( Cellular repair and autophagy ): এরকম পদ্ধতিতে উপবাস করলে, ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি সরিয়ে নতুন কোষ তৈরির পদ্ধতি ত্বরান্বিত হয়।   
  • হার্টের স্বাস্থ্য: কিছু গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে,এই ধরনের উপবাস রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। 

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের ফলাফল অনেকেই পেয়েছেন হাতেনাতে। দেখা গিয়েছে বছরের পর বছর ধরে, এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ে ভরসা রাখেন অনেকে। তবে এর কিছু মন্দ দিকও রয়েছে। সেটাও ভুললে চলবে না। তাই মনে রাখা দরকার, একজন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করবেন কী করবেন না, তা আগে পরামর্শ নিতে হবে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের থেকে। 

  • প্রথম যখন কেউ এই ফাস্টিংয়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তখন একটু অসুবিধে হয়। প্রচণ্ড খিদে-তেষ্টা পায়। আর খাওয়ার সময়ে অনেকটা বেশি খেয়ে ফেলেন।
  • ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে পরিকল্পনা করে শুরু না করলে, শরীরে হঠাৎ করেই পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। তাই খাওয়ার সময়ে পুষ্টিকর খাবারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
  • অনেক সময়ই দেখা যায়, কেউ হয়ত সন্ধে ৬ টা থেকে আর খাচ্ছেন না। কিন্তু তাঁর হঠাৎ নৈশভোজের নিমন্ত্রণ এল বা বন্ধুরা বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার জন্য জমায়েত করলেন। তখন মানসিক ভাবে দৃঢ় থেকে নিজের উপবাসের নিয়ম মেনে চলাটা কিন্তু চ্যালেঞ্জের।    

     ক্লিনিকাল নিউট্রিশনিস্ট এবং ডায়াবেটিস এডুকেটর অরিত্র খাঁ জানালেন, সারাদিনে বেশিরভাগ মানুষ ৪ থেকে ৬ বার খান। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে তা চলবে না। সন্ধে ৬ টার পর তিনি আর খেতে পারবেন না। সেটাই দিনের শেষ খাবার। আবার তিনি পরের দিন সকাল ৬ টার পর খেতে পারেন। কেউ ৮ ঘণ্টার বিরতি রাখেন, কেউ ১২ ঘণ্টা বিরতি রাখেন। দেখা যায়, আমরা যে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাই, তা লাইপোজেনেসিস পদ্ধতির মাধ্যমে, ফ্যাট বা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় মোটা হওয়ার সমস্যা। আর তা থেকেই বাড়ে শরীরে একাধিক অসুখের ঝুঁকি। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে, যে সময়টা আমরা খাবার খাচ্ছি না, সেই সময়টা শরীর শক্তি সংগ্রহ করে শরীরে ইতিমধ্যেই জমে থাকা শক্তি বা ক্যালরি থেকে। তাহলেই দেখা যায় ওয়েট লস হচ্ছে। এটাই ভাল দিক। 

    তবে মনে রাখতে হবে, বেশ কিছু কোমর্বিডিটি থাকলে এই ডায়েট অনুসরণ করা বিপজ্জনক হতে পারে। কেউ যদি ইনসুলিন নেন তিনি কিন্তু এই ধরনের উপবাস করতে পারবেন না। তার কিন্তু ডায়াবেটিক কোমা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।  তাই ইনসুলিন নেন যাঁরা, তাঁরা একেবারেই এই ডায়েট করবেন না। এছাড়াও আরও কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে এই ধরনের ডায়েট করতে পারবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হবে। তাই নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ ছাড়া মোটেও এই ধরনের ফাস্টিং করা যাবে না। অরিত্র খাঁ-র মতে কেউ সারা জীবনের জন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করতে পারবেন না। কেউ কিছুদিন ধরে বা কিছু মাস ধরে এই ডায়েটপ্ল্যান ফলো করতে পারেন। অমুখ সেলিব্রিটি এই ডায়েট ফলো করছেন বলেই আমাকেও করতে হবে , এমন ভাবা বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ যে কোনও সেলিব্রিটি কোনও না কোনও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শেই করছেন। কোনও সমস্যা হলে তাঁদের জিগ্যেসও করতে পারছেন। সেটা কিন্তু বাইরের লোক জানতে পারছেন না। তাই ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে তবেই এ-পথে হাঁটুন।

    কুমারদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়


  • অনন্যা ভৌমিক
    অনন্যা ভৌমিক



    অরিত্র খাঁ
    অরিত্র খাঁ

     

     

     

 

 

Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )

Calculate The Age Through Age Calculator

আরও দেখুন