জুনপুট সৈকতে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপন করবে ডিআরডিও, মৎস্যজীবীরা ক্ষতির আশঙ্কায়

জমি আন্দোলনের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথা সবাই জানেন। যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গড়ার টার্নিং পয়েন্ট। এই পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে বহু বছর আগে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কথা হয়েছিল। কিন্তু সেটাও স্থানীয় মানুষজনের প্রতিরোধে সম্ভব হয়নি। এবার সেই হরিপুরের কাছেই জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হতে চলেছে বলে খবর। কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ডিআরডিও এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা করেছে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই এখন আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। আবার কি আন্দোলন শুরু হবে?‌ উঠছে প্রশ্ন।

এদিকে এই ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে জেলায়। সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে অথবা মার্চ মাসের শুরুতেই এখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ডিআরডিও। এই খবর প্রকাশ্যে আসে যখন লঞ্চিং প্যাড তৈরি হয়ে বসেছে বোর্ড। মৎস্যজীবীদের আশঙ্কা, এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে দূষণ বাড়বে। তার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীবন–জীবিকা। তাই এটা ঠেকাতে আন্দোলনের কথাও ভাবছেন তাঁরা। কারণ এসবের সঙ্গে জীবন–জীবিকা জড়িয়ে আছে। তাই এখানকার বাসিন্দারা জেলার সরকারি আধিকারিকদের কাছে ছুটছেন। বিষয়টি ঘটলে কতটা ক্ষতি হবে জানতে।

অন্যদিকে ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণ যদি জুনপুট থেকে হয় তাহলে সেটা এই রাজ্যে হবে প্রথমবার। এই বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তনবীর আফজল বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে অথবা মার্চ মাসের শুরুতে ডিআরডিও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করবে। একটা রকেট ছাড়া হবে বালেশ্বর থেকে। আর একটা ছাড়া হবে জুনপুট থেকে। দু’টো ক্ষেপণাস্ত্রকে নিয়ে গবেষণা করার জন্য জেলার এই জায়গাটি বেছে নিয়েছে ডিআরডিও।’ আর তাই রাজ্য সরকার জমিও দিয়েছে। সব সহযোগিতা করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সুতরাং খবরটি সত্যি তা বুঝতে পেরেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর তাতেই চর্চা তুঙ্গে উঠেছে।

আরও পড়ুন:‌ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠক শুরু করলেন মমতা, দায়িত্ব থেকে প্রার্থী ঠিক করছেন নিজেই

এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হলে কাঁথি–১ ব্লকের বিরামপুট এবং দেশপ্রাণ ব্লকের চেচড়াপুট গ্রামে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখানের ব্লক প্রশাসন এবং ভূমি দফতর সমীক্ষা করে একটি রিপোর্ট কাঁথির মহকুমাশাসকের দফতরে জমা দিয়েছে। আর তারপরই এখানকার মানুষজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। তাতেই আতঙ্ক চরমে উঠেছে। নানা ক্ষতির আশঙ্কায় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসক শৌভিক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সময় গোটা এলাকা জুড়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে ডিআরডিও। কিছু মানুষকে কিছুক্ষণের জন্য সরে যেতে হবে। ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আছে।’ কাঁথি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে এই জুনপুট। রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরির বক্তব্য, ‘মৎস্যজীবীদের জীবন–জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা প্রতিরোধ করব।’