কার কপালে কী থাকে তা কেউ জানে না। আর বিপদ তো বলে আসে না কারও জীবনে … এমনই এক বিপদের সম্মুখীন হয়েছে এক মহিলা। কাজ করতে গিয়ে ক্লান্তির বশে ঝরনার জল পান করেছিলেন। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। কফের সমস্যা হয়েছে মনে করে দিনের পর দিন চলেছে ঘরোয়া টোটকা সঙ্গে অবহেলা। অবশেষে যা বের হল তাতে চক্ষু চড়কগাছ চিকিৎসকদের। ৪০ বছর বয়সী ওই মহিলার শ্বাসনালীতে নড়াচড়া করছে জ্যান্ত জোঁক! রক্ত শুষে নিচ্ছিল ধীরে ধীরে। এদিকে মহিলার তো প্রাণ যায় যায় দশা। শ্বাস নিতে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনই গলায় বেজায় ব্যথা। প্রথমে ব্যাপারটা বোঝা যায়নি। গলার কাছে কিছু দলা পাকিয়ে উঠছিল মাঝে মাঝেই। সেই সঙ্গে ঢোঁক গিলতে, খাবার খেতে কষ্ট হচ্ছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে গেলে সেখানেই ডাক্তাররা পরীক্ষা করে আসল ব্যাপারটা ধরতে পারেন।
তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করে শ্বাসনালির ভিতরে আটকে থাকা জীবন্ত জোঁক বার করে এক মহিলার প্রাণ বাঁচালেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের এক দল চিকিৎসক। শুক্রবার ওই অস্ত্রোপচার করে জোঁকটি বার করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। ওই দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ‘ইএনটি’র বহির্বিভাগে ওই সমস্যা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ওই গোরুবাথানের বাসিন্দা ওই মহিলা।
(আরও পড়ুন: ওজন কমাতে রোজ খান এই ব্রেকফাস্ট! এক সপ্তাহ পরে নিজেকে দেখলে চিনতে পারবেন না)
চল্লিশ বছর বয়সী এক মহিলার শ্বাসনালিতে জোঁক আটকে থাকার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। ওই মহিলা জানান, দিন ১৫ আগে তিনি বাড়ির কাছেই একটি পাহাড়ি ঝোরার জল হাতে ধরে খেয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তখনই জলের সঙ্গে জোঁক তার গলায় চলে গিয়েছিল। ঘটনার পর থেকে তার কাশি শুরু হয়। শ্বাসকষ্ট না হলেও তার মনে হচ্ছিল, গলায় কফ বা কিছু আটকে রয়েছে।
সমস্যা বাড়তে থাকায় তিনি প্রথমে গরুবাথান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। ৩১ জানুয়ারি তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। থাইরয়েড ও প্রস্রাবের পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু সমস্যা সমাধান হয় না। ২ ফেব্রুয়ারি, পরিবারের লোকজন তাকে শিলিগুড়িতে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানেই শ্বাসনালিতে জোঁক আটকে থাকার কথা জানা যায়। চিকিৎসক তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (NBMCH) যেতে বলেন। শুক্রবার, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (NBMCH) বহির্বিভাগে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করে নেন এবং সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার করেন।
(আরও পড়ুন: খেলে তো গুণ পাওয়াই যায়, রাতে বালিশের নীচে রসুনের কোয়া রাখলে কী কী উপকার পাবেন)
এদিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (NBMCH) ইএনটি বিভাগের প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো বলেন, ‘জোঁকটিকে বের করতে ট্রাকিওস্টমি করা হয়। এটি করে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিক রাখা হয়। গলার একটু নিচের দিকে ফুটো করে ৮ মিলিমিটার ব্যাসের ‘ট্র্যাকিওস্টমি টিউব’ ঢোকানো হয় রোগীর কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর জন্য। অস্ত্রোপচার চলার সময়েও রোগী যাতে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে সেজন্য এই ব্যবস্থা করা হয়। শ্বাসনালিতে উইন্ডপাইপ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই উইন্ডপাইপের কাজ হল শ্বাসপ্রশ্বাসকে স্বাভাবিক রাখা। ফুসফুসে যাতে বায়ু চলাচল করতে পারে তার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়। তারপর অপারেশনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। মহিলার অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।’
রাধেশ্যামবাবু এও বলেন, ‘এর আগে, ২০২২ সালে ডিসেম্বরে কালিম্পঙের ৪৮ বছরের এক ব্যক্তি একই সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন। পাহাড়ে জল সরবরাহের পাইপে মুখ দিয়ে টেনে জল খেতে গিয়ে জোঁক চলে যায় শ্বাসনালিতে। সে ক্ষেত্রেও বার করা হয়।’
রোগির স্বামী নবীন রাই বলেন, ‘এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে ঋণী হয়ে রইলাম। স্ত্রীয়ের গলায় যে জোঁক ঢুকে যেতে পারে, ভাবতেই পারিনি। স্ত্রী এখন ভালই রয়েছে।’
বিভাগীয় প্রধান ছাড়া ডাঃ গৌতম দাস, ডাঃ সৌমেন্দু ভৌমিক, ডাঃ তুহিন শাসমল, ডাঃ আজাহুরুদ্দিন, ডাঃ অজিতাভ সরকার এবং ডাঃ সন্দীপ মন্ডল সহ অ্যানেস্থেশিয়া দলে ডাঃ ধর্মরাজ, ডাঃ নিশা ভুটিয়া, ডাঃ সৌরভ কর্মকার, ডাঃ দিয়া মিত্র এবং ডাঃ পার্সি মান্ডির মতো চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বলা বাহুল্য, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (NBMCH) ইএনটি বিভাগের প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো সকলের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চেয়ে বলেন, ‘এই ধরনের সংকটময় পরিস্থিতি এড়াতে, যেকোনো খোলা স্থান থেকে জল পান করা এবং খাবার খাওয়ার সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে।’