হামাসের ধ্বংস চায় কয়েকজন ইসরায়েলি জিম্মির পরিবার

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তির দাবিতে এতদিন ধরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে আসছিল তাদের স্বজনরা। তবে এখন জিম্মিদের মুক্তি নয় বরং হামাসের ধ্বংসের দাবি করছেন তাদের কয়েকজন। স্বজনদের ফিরে পাওয়ার পরিবর্তে সম্ভাব্য আরও একটি হামলা থেকে বাঁচতে হামাসের ধ্বংস দেখাটাই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এই খবর জানিয়েছে।

জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলের প্রায় প্রতিটি বিক্ষোভে ‘এখন! এখন! এখনই!’ বলে আওয়াজ তুলেছেন ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার। হামাসের হাতে আটক কয়েক ডজন জিম্মিকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েল সরকারকে চাপে ফেলার প্রায় সব চেষ্টাই  করেছিলেন তারা। তবে জিম্মিদের পরিবারগুলোর একটি অংশ এবার ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। তারা বলছে, সেনাবাহিনীকে আগে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পরাজিত করতে দিন। এতে যদি তাদের প্রিয়জনদের ফিরে আসতে বিলম্বও হয় তবে, তাই হোক।

এই পরিবারগুলোর যুক্তি হলো, যেকোনও জিম্মি চুক্তিতে ইসরায়েলকে তাদের কাছে কারাবন্দি বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিদের মুক্তির মাধ্যমে যে মূল্য চুকাতে হবে তা ভবিষ্যতে দেশটিকে বিপন্ন করবে।

হামাসের হাতে বন্দি ২৩ বছর বয়সী ইতানের মা তাবিকা মোর বলেছেন, ‘আপনি সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দিলে তারা আবারও খুনোখুনিতেই লিপ্ত হবে। সব সময় এমনই হয়েছে।’

চার মাস আগে তার ছেলে ইতানকে নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে সশস্ত্র যোদ্ধারা জিম্মি করে নিয়ে যায়। সেখানে সে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করত।

মোর ফোনকলে এপিকে বলেছেন, ‘আপনি কীভাবে সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলবেন আমি শুধু আমার ছেলেকেই ফিরে পেতে চাই আপনাদের ব্যাপারে আমি ভাবি না? শুধু আমাদের ছেলে নয়, পুরো দেশের কথা ভেবেই আমরা উদ্বিগ্ন।’

তবে জিম্মিদের পরিবারের বেশিরভাগ আত্মীয়ই মোরের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, শুধু একটি চুক্তিই জিম্মিদের মুক্ত করতে পারে। গাজার বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। দেশটি প্রধানমন্ত্রীর বুধবারের মন্তব্য তাদের এই আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জিম্মি চুক্তির জন্য হামাসের সর্বশেষ দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তখন চুক্তির পরিবর্তে ‘পূর্ণ বিজয়’ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় অন্তত এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। তাদের প্রায় সবাই বেসামরিক লোক। তখন আনুমানিক ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় সশস্ত্র যোদ্ধারা। এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েলি সেনাদের হাতে অঞ্চলটিতে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।

নভেম্বরে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে প্রায় ১০০ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তাদেরকে ছোটখাটো অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল।

বুধবার সাংবাদিকদের নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘হামাসের ভ্রান্ত দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করা শুধু জিম্মিদের মুক্তিই দেবে না বরং আরেকটি গণহত্যা ডেকে আনবে।’

নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্য জিম্মিদের পরিবারের অধিকাংশের জন্যই বিধ্বংসী ছিল।

নভেম্বরে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের মধ্যে একজন ৭২ বছর বয়সী আদিনা মোশে। নেতানিয়াহুকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা আপনি এই পথ ধরে এগিয়ে গেলে আর কোনও জিম্মিই জীবিত থাকবে না।’