Narasimha Rao: মরণোত্তর ভারতরত্নে সম্মানিত প্রাক্তন PM নরসিমহা রাও, দেশের ‘আর্থিক সংস্কারের জনক’ এর সাফল্যের সফর একনজরে

‘অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও গারু সম্মানিত হতে চলেছেন ভাকতরত্নে।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই শব্দবন্ধনী দিয়েই এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন দেশে মরোণোত্তর ভারতরত্ন প্রাপকদের মধ্যে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাওয়ের নাম। তেলুগু ভাষায় ‘গারু’ শব্দ দিয়ে বিশিষ্টদের সম্মান সূচক সম্বোধন করা হয়। আর নরসিমহা রাওকেও নিজের পোস্টের লেখায় সেই সম্বোধন করে শুক্রবার ভারতরত্ন প্রাপকদের তালিকা ঘোষণা করেন মোদী।

দেশের এক কঠিন আর্থিক পরিস্থিতি থেকে তিনি কীভাবে সংকটমুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন, তা আজও চর্চিত বিষয় ভারতীয় রাজনীতির অলিন্দে। ‘দেশের আর্থিক সংস্কারের জনক’ হিসাবে পরিচিত এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাওয়ের সাফল্যের সফরের খতিয়ান দেখে নেওয়া যাক একনজরে।

(Vande Bharat latest:দিল্লি-হাওড়া রুটে বন্দেভারত আরও গতিতে ছুটবে? ঘণ্টায় বেড়ে কত হতে পারে স্পিড!আশার বার্তা রেলমন্ত্রীর ) 

জন্ম-  পি.ভি. নরসিমহা রাও ১৯২১ সালের ২৮ জুন বর্তমান তেলেঙ্গানার ওয়ারঙ্গল জেলার নরসাম্পেটের লাকনেপল্লী গ্রামে একটি তেলেগু নিয়োগী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তেলাঙ্গানার বাঙ্গারা গ্রামে বেড়ে ওঠা আর সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষা। এরপর ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ ও পরে নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রি। ততদিনে ১৯৩০ এর বন্দে মাতরম আন্দোলনে শামিল হয়ে যান এই নেতা। দেশ তখন জ্বলছে স্বাধীনতার আন্দোলনের আগুনে। 

স্বাধীনতার বিপ্লবী থেকে দেশনেতা- দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে তাঁর রাজনীতিতে হাতেখরি শুরু। পরে স্বাধীনতার পর তিনি যোগ দেন কংগ্রেসে। এরপর ১৯৫৭ থেকে ৭৭ সাল পর্যন্ত তৎকালীন অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের বিধায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে ইন্দিরাকে কংগ্রেসের নতুন রূপ গঠনে তিনি সাহায্য করতে থাকেন। এদিকে, ইন্দিরা ও পরবর্তীকালে রাজীব গান্ধীর মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন সদস্য। কখনও কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী তো কখনও বিদেশমন্ত্রীর পদে তিনি আসীন হন। ধীরে ধীরে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে নরসিমহা রাও একটি তাবড় নাম হয়ে ওঠেন। জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসাবে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন।

(অগ্নিগর্ভ মায়ানমার, সেনার ৬৮ জন পালালেন বাংলাদেশে! দিল্লিতে নিরাপত্তা নিয়ে ডোভাল-সাক্ষাতে হাসিনার বিদেশমন্ত্রী )

রাজনৈতিক সফর- ১৯৯১ সালে দেশের সবচেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে ভোটে জেতে কংগ্রেস। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের নেতৃত্বের সুযোগ আসে নরসিমা রাওয়ের কাছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেন নরসিমহা রাও। গান্ধী-নেহরু পরিবারের বাইরে তিনিই হন কংগ্রেস থেকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি টানা ৫ বছর ওই পদে ছিলেন। এছাড়াও দক্ষিণ ভারত থেকে তিনিই প্রথম যিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সংসদে ফিরতে তিনি নানন্দিয়াল থেকে উপনির্বাচনে লড়েন। জিতে যান ৫ লাখ ভোটে। যা সেই সময় গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়েছিল।

মনমোহন থেকে অটলবিহারী এবং নরসিমার সম্পর্ক- নরসিমহা রাওই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি তৎকালীন সময়ে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে অর্থমন্ত্রী করেন। আর সেই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন মনমোহন সিং। এছাড়াও তখন বিরোধী দলনেতা ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। নরসিমা তাঁকে দেন মন্ত্রিপরিষদের পদমর্যাদা। বিরোধী দলের একজন সদস্যকে মন্ত্রিপরিষদের পদমর্যাদা দেওয়া একমাত্র উদাহরণ নরসিমা রাখেন। তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিরোধী নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকেও পাঠান।

দেশের আর্থিক সংস্কারের জনক- প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং রাওকে ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রকৃত জনক বলে বর্ণনা করেন। রাও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উত্তরণের জন্য মনমোহন সিংকে তাঁর অর্থমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। নরসিমহার নির্দেশ মতো, মনমোহন সিং ভারতের বিশ্বায়নের সূচনা করেছিলেন। নরসিমহা সরকারের যে সংস্কারগুলি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) নীতিগুলিকে বাস্তবায়িত করে। যার হাত ধরে প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় থাকা দেশকে অর্থনৈতিক পতন থেকে উদ্ধার করা হয়।   

এরপর ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৮৩ বছর বয়সে দেশের নবম প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাওয়ের জীবনাবসান হয়। আর তাঁকে ২০২৪ সালে মরণোত্তর ভারতরত্নে সম্মানিত করার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

(প্রতিবেদনের তথ্য সূত্র উইকিপিডিয়া)