National Deworming Day 2024: কৃমি শিশুদের কতটা ক্ষতি করতে পারে, জানেন কি? জানলে বুঝবেন ডিওয়ার্মিং ডে’র তাৎপর্য

ভারতজুড়ে জাতীয় কৃমিনাশক দিবস কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এদিন সারাদেশের ১ থেকে ১৯ বছর বয়সী সব শিশু-কিশোরদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দেশের প্রতি রাজ্যের প্রতিটি স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বিনামূল্যে এই কৃমিনাশক ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের উদ্যোগে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের সহায়তায় এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কৃমির কারণে শিশুর অপুষ্টি, রক্তাল্পতাসহ মস্তিস্কের সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটে না, ‍যার রোধ করতেই কেন্দ্রের এই উদ্যোগ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, অন্ত্রের কৃমি বা মাটি থেকে আসা কৃমি নেমাটোড অ্যাসকারিস লুমব্রিকোয়েডস (রাউন্ডওয়ার্ম), ট্রাইচুরিস ট্রাইচিউরা (হুইপওয়ার্ম), এবং অ্যানসাইলোস্টোমা ডুওডেনেল বা নেকেটর আমেরিকানস (হুকওয়ার্ম) সংক্রমণের মূল কারণের পাশাপাশি মানুষের অন্যান্য অঙ্গেরও সমান তালে ক্ষতিসাধন করে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃমির সংক্রমণ শিশুদের পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। সেইসঙ্গে রক্তস্বল্পতা, অপুষ্টি ও মানসিক এবং শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ভারত সরকার সকল রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ও স্কুলের মাধ্যমে কৃমিনাশক ট্যাবলেট পরিচালনা করে। সাধারণত, জাতীয় কৃমিনাশক দিবস বছরে দুই কিস্তিতে পালন করা হয়। প্রথমটি ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে , এরপর ১০ অগাস্টে দ্বিতীয় কিস্তিতে পালন করা হয়।

জাতীয় কৃমিনাশক দিবস পালনের জন্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রক বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • কৃমিনাশক ওষুধের বিতরণ
  • সচেতনতা শিবির আয়োজন
  • স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়িতে মেলা

কৃমিনাশক কী?

কৃমিনাশক হল এমন একটি ওষুধ যা শিশুর দেহে পরজীবী বা অন্ত্রের কৃমিকে নির্মূল করে কৃমি সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমিনাশক ট্যাবলেট বা ওষুধ না খেলে তা মাটি-জন্মিত হেলমিন্থ নামক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে কৃমির একটি গুচ্ছ মানবদেহকে আক্রমণ করে। ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে কৃমি সংক্রমণ শিশু মৃত্যুর হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে।

কৃমির প্রকারভেদ

মানুষকে সংক্রমিত করে এমন তিন ধরনের কৃমি হল গোল কৃমি (Ascaris lumbricoides), Trichuris trichiura এবং Necator americanus ও Ancylostoma duodenale।

কৃমিনাশের গুরুত্ব

  • বাচ্চাদের যদি সঠিক সময়ের ব্যবধানে কৃমি নাশ করানো হয় তাহলে শরীরের সঠিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টির সঠিক মাত্রায় শোষণ হবে ।
  • স্কুলে বাচ্চার মনোযোগ এবং উৎসাহ বাড়বে ।
  • সমাজের প্রতিটি স্তরে বহু দিন ধরে চলা কৃমি সংক্রমণের মাত্রা হ্রাস পাবে ।
  • পেটের বিভিন্ন রোগ এবং রক্তাল্পতার আশঙ্কা অনেকটাই কমবে ।
  • এর ফলে বাচ্চার উৎসাহ এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।

এসটিএইচ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে?

ডক্টর বিজয়ানন্দের ব্যাখ্যা, মাটি থেকে পরিবাহিত হেলমিন্থ বা পরজীবী কৃমি খুব সহজেই দূষিত খাবার বা দূষিত হাতের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে । সাধারণভাবে যে কৃমিগুলি দেখা যায় সেগুলি হল, গোলকৃমি, ফিতাকৃমি এবং আঁকশিকৃমি । কোনও সংক্রামিত ব্যক্তি যখন খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করেন, তখন তাঁর মলের মাধ্যমে পরিণত কৃমির ডিম মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে । দূষিত মাটির মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে সংক্রমণ ঘটাতে পারে । যেমন, ভালো করে না ধুয়ে শাকসবজি বা ফল খেলে বা শাক সবজি ভালো করে রান্না করে না খেলে বা খাওয়ার আগে হাত না ধুলে বা সংক্রামিত শৌচাগার ব্যবহার করলে বা দূষিত জল খেলে ইত্যাদি ।

এই কৃমিগুলি ঠিক কী করে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীরে কৃমি ঢোকার পর তা অন্ত্রে প্রবেশ করে। এরপর সেখানে পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করে। সেখান থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করতে শুরু করে । এ ছাড়াও তারা অন্ত্রের ভিতরের স্তরের মারাত্মক ক্ষতি করে । এর ফলে আমাদের শরীরের শোষণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় । এর ফলশ্রুতি হিসাবে হয় রক্তাল্পতা। পুষ্টি সঠিক ভাবে না পাওয়ার ফলে অপুষ্টিজনিত নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ থমকে যায়।

অবস্থা মারাত্মক হলে অন্ত্র আটকে যেতে পারে। এমনকী, অন্ত্রে অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে। আর তাই পর্যায়ক্রমে কৃমিনাশ খুবই প্রয়োজন। কৃমি সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষ করে বাচ্চাদের বছরে এক বার করে কৃমিনাশ করানো অবশ্যই উচিত।

আমাদের বিশেষজ্ঞরা বললেন, ‘বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ অনেক বেশি পরিমাণে দেখা গেলেও এই সংক্রমণ বড়দের মধ্যেও হতে পারে। এগুলি শুধুমাত্র যে সংক্রামক তা-ই নয়, এগুলি বছরের পর বছর শরীরের মধ্যে থেকে যেতে পারে এবং শারীরিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ধ্বংস করতে পারে। তাই এর উপদ্রবে বাচ্চার কর্মক্ষমতা চোখে পড়ার মতো কমে যেতে পারে। তবে এটা না তো ভয়ঙ্কর রোগ, না তো এটা প্রাণ সংশয় ঘটাতে পারে। কিন্তু এটি বহু দূরারোগ্য রোগের জন্ম দিতে পারে যেমন অন্ত্রে আটকে যাওয়া বা মারাত্মক ধরনের রক্তাল্পতা হওয়া ইত্যাদি।’

সংক্রমণ ঠেকাতে কী করণীয়

এই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ভারতের জাতীয় স্বাস্থ্য পোর্টাল (এনএইচপি) বেশ কয়েকটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কথা বলেছে। যেমন—

  • খোলা জায়গায় শৌচকর্ম না করা।
  • বারে বারে হাত ধোওয়া। বিশেষ করে খাওয়ার আগে এবং শৌচ করার পরে ।
  • জুতো এবং চটি যতটা সম্ভব বেশি ব্যবহার করা।
  • পরিষ্কার এবং নিরাপদ জলে ফল এবং শাক সবজি ভালো করে ধুয়ে ব্যবহার করা।
  • ভালো করে রান্না করা খাবার খাওয়া।