পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় আসামি ৭ শতাধিক

মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানিকে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের বাদাঘাটে একটি ওয়াজ মাহফিলে পুলিশ ওয়াজ করতে না দেয়ায় উত্তেজিত জনতা পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, বাঁশের তৈরি সীমানা প্রাচীর এবং সাইনবোর্ড ভাঙচুর করার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৭শত জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে।

এই ঘটনার পর থেকে এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ কঠোর অবস্থা রয়েছে। মামলা দায়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিন গত রাত ১২ টা পর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে ঘটনাটি ঘটে। এসময় পুলিশ ২ রাউন্ড টি আর সেল, ২৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। এঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ ২০জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে।

আহতরা হল- কনস্টেবল সালাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ ওসমানসহ ২০জন। অন্যান্য আহতদের নাম পাওয়া যায়নি।

এদিকে আটককৃতরা হল, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন মাহারাম গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে মোজাম্মিল হক(৩৩), কাশতাল গ্রামের মৃত তবারক ইসলামের ছেলে রায়হান মিয়া(৩০), পইলানপুর গ্রামের মতৃ সিরাজুল ইসলামের ছেলে বশির আহমেদ(৩৮), নাসির আহমেদ(৩১), বাদাঘাট গ্রামের মোশাররফ হোসেন(২০)।

প্রত্যক্ষদর্শী,স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,বাদাঘাট বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে হিলফুল ফুযুল নামে সংঘটনের আয়োজনে ওয়াজ মাহফিলে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর তিনি ওয়াজ করতে আসবেন শুনে তাকে একপলক দেখতে ও তার মুখ থেকে ওয়াজ শুনতে বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। রাত ১২টায় বিশ্বম্বরপুর উপজেলায় মিয়ার চর ঘাট পার হয়ে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের পাঠানপাড়ায় চলেও আসে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী। আয়োজক কমিটি পুলিশের সাথে অনেক কথা বলার পরও কোনো কসজ না হওয়ায় সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।

পরে রাত ১২ টার পর মাইকে জানানো হয় তিনি আইনি জটিলতার কারণে আসতে পারবেন না আর ওয়াজ করতে পারবেন না। আজকের মত মাহফিলও শেষ। আপনারা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। এসময় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য আহ্বান জানায় আয়োজক কমিটির দায়িত্বশীল গন। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে কোনো ভাবেই সামাল দিতে পারেনি,অনেকেই নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলেও উত্তেজিত জনতা নানান শ্লোগানে মিছিল বের করে,পরে পুলিশ ফাঁড়ির দিকে অগ্রসর হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,যখন আগতরা জানতে পারল যে পুলিশ মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ওয়াজ মাহফিলেও আসতে দিচ্ছে না। তাকে মাহফিলে আসার পথ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে এতে আগতদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরপর পরেই সংশ্লিষ্টরা ওয়াজ মাহফিলেও শেষ ঘোষণা করে ও আগামী কাল আবারও শুরু হবে বলে জানায়। এরপর পরেই উত্তেজিতরা মিছিল করে ও পুলিশ ফাঁড়ির দিকে যায়।

পুলিশ জানায়,উত্তেজিত জনতা পুলিশের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান তুলে বিক্ষোভ মিছিল করে। এক প্রযায়ে মিছিলটি বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ,সাইনবোর্ড ও বাঁশের তৈরি সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর করলে পুলিশ ২ রাউন্ড টি আর শেল, ৩০রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য সহ ২০জন আহত হয়েছে। এঘটনায় ৫ যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফাঁড়িতে মোতায়েন করা হয়েছে। ঘা ডাকা দিয়েছে আয়োজক কমিটির দায়িত্বশীলরা।

সচেতন মহল দাবি করছেন এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক তবে সাধারণ মানুষকে যেন কোনো হয়রানি না করা হয়। কারণ এই ঘটনার সাথে কিছু সংখ্যক অতিউৎসাহী ও আবেগ প্রবন মানুষ জড়িত।

বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ নাজমুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এই ঘটনার মামলার আসামিদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধবতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তাহিরপুর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ২ রাউন্ড টি আর সেল ও ২৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়া হয়। এঘটনায় মামলায় নাম উল্লিখিতদের মধ্যে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। বিকেলে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যায় বাদাঘাট বাজারে এই বিষয়ে সবার সাথে আলোচনা করেন এবং কোনো নিরপরাধ মানুকে হয়রানি করা হবে না তবে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন।



সালাউদ্দিন/সাএ