নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলো যুক্তরাষ্ট্র

আগে থেকেই বোঝাপড়া ছিল নির্বাচনের পরে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিনিধি দল পাঠাবে। সে পথেই এগোলো মার্কিন প্রশাসন। ঢাকা পৌঁছে নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলো তাদের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। সরকারের মন্ত্রী ও কর্তাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ‘নতুন অধ্যায়’ শুরুর আগ্রহ নিয়ে সফর করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে তারা কোন কোন ক্ষেত্রে আগ্রহী তা বোঝা যাবে কাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সেদিকে নজর রাখলেও।   

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা এসে পৌঁছান ইউএসএআইডির এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার এবং ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার। রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রতিনিধি দলের নেতা মার্কিন রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ডিরেক্টর এলিন লাউবাকের শ্রীলঙ্কা থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছান।

দুই দিনের সফরে প্রতিনিধি দলটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া বিএনপির নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতাসহ অন্যদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

নতুন অধ্যায়

এর আগেও দুই দেশের মধ্যে ‘নতুন অধ্যায়’ শুরু করার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এবার নতুন অধ্যায় শুরুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের বদলে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আলোচনা শুরুর কোনও তাৎপর্য আছে কিনা জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এলিন লাউবাকের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং এনএসসি হচ্ছে হোয়াইট হাউজের একটি অংশ। আলোচনা তার মাধ্যমে শুরু করাটা ইঙ্গিত করে যে তারা নিরাপত্তা বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

মিয়ানমারে চলমান ঘটনা এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ কী ভাবছে, সেটি তারা জানতে চায়। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং তাদের প্রত্যাবাসনে এর কী প্রভাব পড়তে পারে সেটির মূল্যায়নও তারা শুনতে চায় বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে তাদের নিজস্ব কৌশল আছে এবং সেটি অবশ্যই তাদের আলোচনায় থাকবে।’

অগ্রাধিকার বিষয়গুলো

মার্কিন প্রতিনিধি দল যাদের সঙ্গে দেখা করেছে ওই বিষয়ে লোকগুলো তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলে জানান সাবেক রাষ্ট্রদূত। হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমেরিকানরা অনেক জায়গায় সুযোগ দিতে রাজি আছে। আমি সেগুলো নিতে সক্ষম কিনা সেটির ওপর নির্ভর করবে এই সম্পর্ক আমি কীভাবে কাজে লাগাবো। আমাদের সক্ষমতার ওপর অনেকাংশে তা নির্ভর করবে।’

পরিবেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন তাদের অগ্রাধিকার বিষয়। সালমান রহমানের সঙ্গে দেখা করে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সম্পর্ককে তারা কাজ করতে চায় বলে বোঝাতে চাইছে। কাদের সঙ্গে দেখা করছে সেটি ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যাবে তারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে, বলে তিনি জানান।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অনুপস্থিতি

সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদ উপস্থিত থাকলেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের তারা আগেই জানিয়েছিল মার্কিন রাষ্ট্রদূত বৈঠকে থাকবেন না।’

এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘হোয়াইট হাউজের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এলে অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে এবং সে কারণে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

ইউএসএআইডির প্রতিনিধিও দলে আছে এবং তাদের এখানে বড় কার্যক্রম আছে। ফলে সেটার মূল্যায়নও তারা করেছেন বলে তিনি জানান।

পিটার হাসের অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমেরিকানরা এভাবে কাজ করে না। যেহেতু দলের নেতা রাষ্ট্রদূতের থেকে উচ্চ পদমর্যাদার এবং তারা কতজন যাবে বা না যাবে, সে বিষয়ে তাদের যদি চিন্তা থেকে থাকে, তবে তারা সেভাবেই কাজ করবে।’

আমেরিকান সিস্টেমে রাষ্ট্রদূতদের অত্যন্ত অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং তাদের কাছ থেকে ইনপুট নেয়। তাদের সিস্টেম হচ্ছে অনেক বেশি পেশাদার, যুক্ত করেন তিনি।

আরও পড়ুন-

মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে যেসব বিষয়ে আলোচনা করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ‘নতুন অধ্যায়’: কী চায় দুই দেশ?