দিল্লির জাদুঘর থেকে থাইল্যান্ড গেল ভগবান বুদ্ধের জিনিস, দুই দেশের বন্ধুত্ব আর কূটনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে বৌদ্ধধর্মের

হালে মজবুত হয়েছে ভারত ও থাইল্যান্ডের সম্পর্ক। বন্ধুত্বের উপহার হিসাবে বৌদ্ধ ধর্মকে সম্মান জানিয়ে থাইল্যান্ডকে ভগবান বুদ্ধ এবং তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি পুরাতাত্ত্বিক বস্তু পাঠিয়েছে ভারত। ব্যক্তিগতভাবে ভারতের এই উপহারগুলি স্বাদরে গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন। এইভাবেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মকে সম্মান দেখিয়ে বেইজিংয়ের পথ আটকে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে নয়া দিল্লি। এমনই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

ভগবান বুদ্ধ এবং তাঁর শিষ্য, অরহন্ত সারিপুত্ত এবং অরহন্ত মহা মোগ্গাল্লানার সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন (মরদেহের অবশিষ্টাংশ) গত মাসেই ব্যাংককে নিয়ে গিয়েছিল একটি ভারতীয় প্রতিনিধিদল। দায়িত্বে ছিল ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF)। ফ্লাইটে এই নিদর্শনগুলি ব্যাংককে নিয়ে যাওয়ার পরপরই, ওই বাহিনীকে গার্ড অফ অনার দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন থাভিসিন এবং তাঁর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা। থাইল্যান্ডের চারটি শহরে ২৫ দিনের জন্য প্রদর্শিত হবে এগুলি। ব্যাংককের সানাম লুয়াং রাজপ্রাসাদের মাঠে প্রদর্শিত হওয়ার পর, সোমবার ধ্বংসাবশেষগুলি চিয়াং মাইতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও খবর।

ভগবান বুদ্ধের ধ্বংসাবশেষগুলি নতুন দিল্লির জাতীয় জাদুঘর থেকে আনা হয়েছিলেন। কপিলাবস্তুর প্রাচীন বৌদ্ধ স্থানের একটি অংশ হিসাবে পিপ্রহভাতে খনন করা হয়েছিল, বুদ্ধের শিষ্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত এই নিদর্শনগুলি মধ্যপ্রদেশের সাঁচির একটি মঠ থেকে আনা হয়। মূলত রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে, ভারত ও থাইল্যান্ডের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব প্রমাণ হিসাবে এই জিনিসগুলিকে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শিত করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, থাই রাজা এবং তাঁর স্ত্রী গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এই নিদর্শনগুলি পরিদর্শন করে সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা কাটিয়েছিলেন।

জানানো হয়েছে, বেশ কয়েক দিনে, প্রায় ১০০,০০০ জন মানুষ ওই নিদর্শনগুলি দেখার জন্য তৈরি প্যাগোডা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। থাই ভক্তদের পাশাপাশি , কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনামের বাসিন্দারাও এই জিনিসগুলির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্যাংককের সাইটটি পরিদর্শন করেছিলেন। জানা গিয়েছে, ৮ মার্চ পর্যন্ত চিয়াং মাই প্রদেশে প্রদর্শিত হওয়ার পর, মার্চ ৯ ও ১৩ তারিখের জন্য এগুলি উবোন রাতচাথানি প্রদেশে এবং ১৪ ও ১৮ মার্চের জন্য ক্রাবি প্রদেশে নিয়ে যাওয়া হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দালাই লামার উত্তরসূরি নিয়োগ করে চিন বৌদ্ধ ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইছে। যদিও বৌদ্ধধর্মের উদ্ভব হয়েছিল আধুনিক নেপাল এবং ভারতে। আবার চিনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া বৌদ্ধ ধর্মকে ‘প্রাচীন চিনা ধর্ম’ হিসাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পরিস্থিতির উপর নজর রেখে বেইজিং অনেকগুলি পদক্ষেপ করেছে। যেমন দালাই লামা, একজন প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে রয়েছেন৷ ভারতও কিন্তু এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বৌদ্ধ ধর্মের হাত শক্ত করে ধরে নিয়েছে ভারত।