এক বছরেও দাখিল হয়নি মামলার প্রতিবেদন

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ‘ক্যাফে কুইন’ ভবনে বিস্ফোরণে ২৪ জন নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এক বছরেও প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন— সেটাও বলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১১ বারের মতো সময় নিয়েছে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। থানা-পুলিশের হাত ঘুরে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

সবশেষ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন সিটিটিসি প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এ জন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত আগামী ৩ এপ্রিল পরবর্তী প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেছেন।

মামলাটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এস এম রাইসুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মিলে আমরা আলামত সংগ্রহ করি। সেই আলামতগুলো অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাব, বিস্ফোরক অধিদফতর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) পরীক্ষা করে। প্রতিটি সংস্থার রিপোর্টে একই কথা আসছে। এখানে বিস্ফোরকের কোনও উপাদান ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণ ঘটেছে গ্যাসের কারণে। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি, যে কোনোভাবে গ্যাস জমে ওই বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তদন্ত করে আমরা এটাই জানতে পেরেছি। সেখানে নাকি একটি হোটেল ছিল। ওই হোটেলের গ্যাসের লাইন বন্ধ থাকলেও পাইপের লাইনটা অক্ষত ছিল। মূলত বিস্ফোরণ ঘটেছে বেসমেন্টের দোকানের কারণে। এমনভাবে ওই দোকানটি করা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সব দিক বিবেচনা করে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল আওয়াল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রতিটি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। কিছুদিন আগে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জন মারা গেছে। বিষয়টি খুবই ভয়াবহ। সেখানে আমার-আপনার পরিবারও থাকতে পারতো। একটা প্রাণ চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না, বা কেউ ফিরিয়ে দেবে না।’

আসামিদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিই নির্দোষ। ওটা একটা নিছক দুর্ঘটনা। ওই ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন তাদের বাবা। আসামিরা শুধু ভাড়া দিয়েছিলেন ওপরের ফ্লোরগুলো। যেখান থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে, নিচের সেই ফ্লোরগুলো ভাড়া দেওয়া হয়নি। এ কারণ আমি বলবো, তারা এখনও নির্দোষ।’

প্রায় ৫০ বছর আগে ওই বিল্ডিংয়ে একটা হোটেল ছিল, শ্রুতি থেকে এমন তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে সেই হোটেলের গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও অক্ষত অবস্থায় ছিল পাইপের লাইন। সেখান থেকে হয়তো বিস্ফোরণ হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত সত্য ঘটনা কী ঘটেছে, সেটা বলা মুশকিল। আসামিদের ভবনটি রাজউকের প্ল্যান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। ভবনটি রাজউক অনুমোদিত ছিল। এখানে যদি কোনও গাফিলতি থাকে সেটা রাজউকের। তারা হয়তো সঠিকভাবে মেইনটেনেন্স করেনি। তারা যদি ঠিকঠাক মেইনটেনেন্স করতো তাহলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। আশা করি, এই মামলা থেকে আসামিরা ন্যায় বিচার পাবেন।’

এদিকে ওই ঘটনায় নিহতের স্বজনেরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি করেছেন। তারা বলছেন, যারা চলে গেছে তাদের আর ফিরে পাবো না। কিন্তু যাদের কারণে তাদের চলে যেতে হয়েছে, সেই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৭ মার্চ গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে ‘ক্যাফে কুইন’ নামে সাত তলা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্যমতে, বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৪ জন মারা যান। ঘটনার দুদিন পর ৯ মার্চ রাতে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ সাহা। এরপর ভবনের মালিক দুই ভাই ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ব্যবসায়ী মিন্টুকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৫৪ ধারায় দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন।