বহরমপুরে ইউসুফ পাঠানের জন্য বাড়ি খুঁজছে তৃণমূল কংগ্রেস, চাপে পড়েছেন অধীর

ব্রিগেড থেকে জনগর্জন সভায় একধাক্কায় ৪২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। জনতার দরবারে দাঁড়িয়ে এভাবে প্রার্থী তালিকা কোনও রাজনৈতিক দল আগে ঘোষণা করেনি। রাজ্য–রাজনীতিতে এমন নজির নেই। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের এই প্রার্থী তালিকা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বিজেপি এখনও ৪২টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারেনি। প্রথম দফায় যে ২০টি নাম ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে থেকে একজনকে তুলে নিতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে এখন ২৩ জনের নাম ঘোষণা করতে হবে বিজেপিকে। এদিকে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়েছে। ইউসুফ পাঠান প্রার্থী হতেই অধীররঞ্জন চৌধুরীর প্যানিক শুরু হয়েছে বলে দাবি করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়।

অধীর চৌধুরী পোড়খাওয়া নেতা। তার উপর পাঁচবারের সাংসদ। কিন্তু তারপরও এলাকা থেকে সমস্যা নির্মূল হয়নি। তাই এই আবহে ইউসুফ পাঠান প্রার্থী হওয়ায় দু’‌পক্ষের লড়াই জোরদার হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার যে এখানে প্রার্থী হবেন তা কল্পনাও করতে পারেননি অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাই এখন চিৎকার করতে শুরু করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হোক বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন অধীর। আসলে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলে তাঁর দিকে কাদা ছোঁড়া যায়। কিন্তু ইউসুফ পাঠানের বিরুদ্ধে কী প্রচার করবে অধীর?‌ এটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে এখানে থেকে লড়াই করতে গেলে বাড়ি দরকার। রবিবার সন্ধ্যা থেকেই ইউসুফের জন্য বহরমপুরে বাড়ির খোঁজ চলছে।

আরও পড়ুন:‌ পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ড.‌ শর্মিলা সরকার, রাজনীতিতে আসার নেপথ্যে বড় কাহিনী

এদিকে ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের নামে কোনও বাজে কথা বললে সেটা ভোটবাক্সে মানুষ জবাব দেবেন। এটা আরও বড় চিন্তার কারণ অধীরের কাছে। কারণ একদিকে ইউসুফ জনপ্রিয় অপরদিকে তাঁর ফ্যান ফলোয়ার রয়েছে খেলার জন্য। তাই এটা বেশ চাপের হয়ে গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির জন্য। ইউসুফ পাঠানের কাছে বহরমপুর সম্পূর্ণ নতুন জায়গা। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র অধীর চৌধুরী হাতের তালুর মতো চেনেন। বিজেপি প্রার্থীও অনেকটাই জানেন। সেখানে ইউসুফ পাঠান বহিরাগত এবং রাজনীতিতে নবীন বলা হচ্ছে। কিন্তু ইউসুফ যখন খেলে দেশের জন্য পুরষ্কার নিয়ে আসেন তখন কোনও নির্দিষ্ট জায়গার জন্য সেটা বরাদ্দ হয় না। সেক্ষেত্রে তিনি বহিরাগত নন বলে পাল্টা যুক্তি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে স্থানীয় নেতাদের সক্রিয় সাহায্য ছাড়া ইউসুফের পক্ষে সমানে সমানে টক্কর দেওয়া অসম্ভব।

অন্যদিকে এই নির্বাচনে বহরমপুর নজরকাড়া কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই সিদ্ধান্ত তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ঝুঁকির হলেও অধীর চৌধুরীর কাছেও চাপের। বিষয়টি যে সহজ হবে না সেটা বুঝতে পারছেন কংগ্রেস সাংসদ। তাই তিনি বলেছেন, ‘‌আমাদের দলের কর্মীদের বারবার বলেছি বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কোনও মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করাবে। কারণ বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে সংখ্যালঘু ভোটের বিভাজন ঘটাতে হবে। আর হিন্দু মানুষজনকে বলতে হবে তোমরা সব বিজেপিকে সমর্থন করো। লক্ষ্য একটাই, অধীর চৌধুরীকে হারাও।’‌ পাল্টা বহরমপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘কংগ্রেস তো ধর্মনিরপেক্ষ নিয়ে কথা বলে। বিজেপি বিভাজনের কথা বলে। আজ ইউসুফ পাঠানের মতো বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার যখন বহরমপুরের প্রার্থী হলেন তখন অধীর চৌধুরীর মুখে মোদীর সুরে বিভাজনের কথা শোনা গেল।’‌