‌কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশ–পুরসভার তরজা চরমে, বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ বিচারপতির

গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার জেরে ১১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে এখন তোলপাড় রাজ্য–রাজনীতি। এবার অন্য একটি বেআইনি নির্মাণ ভাঙা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের এজলাসে তরজায় জড়িয়ে পড়ল পুলিশ এবং কলকাতা পুরসভা। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে কলকাতা পুরসভার অভিযোগ, নারকেলডাঙার বেআইনি নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে পুলিশ অসহযোগিতা করেছে। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারকে ধমক দিয়েছেন নারকেলডাঙা থানার ওসি। পুলিশের পাল্টা অভিযোগ, অসহযোগিতা করা হয়নি। আদালতকে ভুল পথে চালাবার চেষ্টা করছে পুরসভা। দু’‌পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি নির্দেশ দেন, আজ শনিবার থেকে ওই বহুতল ভাঙার কাজ করতে হবে। আর বাড়ির একতলায় থাকা হোটেল খালি করে দিতে হবে।

এদিকে পুলিশ রিপোর্ট দিয়ে আদালতকে জানিয়েছিল, ওই নির্মাণ ভাঙতে সক্ষম নয় পুলিশ। নারকেলডাঙা থানার ওসিকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন বিচারপতি। যদিও পুলিশের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, কলকাতা পুরসভা আদালতকে ভুল পথে চালনা করেছে। বেআইনি নির্মাণ আগেই খালি করেছে পুলিশ। আর নির্মাণের ভিতরের অংশ ভাঙা জানুয়ারি মাসে শুরু হয়েছে। এই বক্তব্যের পর পাল্টা কলকাতা পুরসভার আইনজীবী দেবজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, পুলিশ কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট দিয়েছে, এই কাজ করতে থানা সক্ষম নয়। তারপর আদালত ওসিকে তলব করলে পুরসভার সাব–অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে থানায় ডেকে ধমকানো হয়েছে।

আরও পড়ুন:‌ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটা পরখ করলেন দেব, কেশপুরের ভূমিপুত্রের কাছে লড়াই কি কঠিন?

অন্যদিকে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে ভরা এজলাসে শোরগোল পড়ে যায়। এমনকী দু’‌পক্ষের মধ্যে রীতিমতো তরজা শুরু হয়ে যায়। তখন সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার আদালতে থাকায় তাঁকে বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনাকে কি থানায় ডেকে ধমকানো হয়েছে?’ ইঞ্জিনিয়ার জবাবে বলেন, ‘আমাকে থানায় ডেকে বলা হয়েছে, রমজান মাস চলছে ও ভোট এসে গিয়েছে। তাই ওই বাড়ি ভাঙতে ফোর্স দেওয়া যাবে না।’ তখনই ৬ তলা বাড়িটি ভাঙার নির্দেশ দেন বিচারপতি। আগেও বিচারপতি অমৃতা সিনহা একাধিক নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন। আর গার্ডেনরিচের ঘটনার পরে বিচারপতি অমৃতা সিনহা স্পষ্টভাবেই জানান, বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকবে না।

এছাড়া গার্ডেনরিচ কাণ্ডেও দেখা গিয়েছে মেয়র যখন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের দায়ী করলেন তখন তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তবে গার্ডেনরিচের ক্ষেত্রে পৃথক তদন্ত কমিটি গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশ ও পুরসভার যে তরজা আদালতের ভরা এজলাসে দেখা গিয়েছে, তাতে বেশ তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। তবে নাগরিকদের অনেকেই মনে করেন, বেআইনি নির্মাণের পিছনে পুরসভা এবং পুলিশ দু’‌পক্ষেরই হাত থাকে। আর সেটা ঢাকা দিতেই এখন একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।