ঈদের পর মশা নিধনে মাঠে নামবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন

কাগজে-কলমে জুলাই ও আগস্ট মাসকে ডেঙ্গু মৌসুম ধরা হলেও দেশে এখন সারা বছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই রাজধানী ঢাকায় বাড়তে থাকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করায় এবার বর্ষার আগেই বড় পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন। জানা গেছে, আসন্ন ঈদের পর থেকেই এডিস মশা নিধনে কার্যক্রম শুরু করবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা গেছে, মশা নিধনে প্রতিদিন সকালে লার্ভিসাইডিং এবং বিকালে এডাল্টিসাইডিং করা হবে। পাশাপাশি গত বছর যেসব ওয়ার্ডে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে, সেসব এলাকায় ঈদের পর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করবে সংস্থাটি। এর বাইরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য থানা, আবাসন, প্রাথমিক-উচ্চ ও মহাবিদ্যালয়ে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। মানুষ যেন দায়িত্বশীল হয়ে কোথাও পানি জমতে না দেয় এবং নিজ বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখে— এ উদ্দেশ্যে বড় আকারে কয়েকটি কর্মসূচিও নেওয়া হবে। এ ছাড়া নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অনেক বেশি কঠোরতা দেখানো হবে।

ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জানুয়ারি মাস থেকেই আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি। তবে ঈদের পর যেহেতু বর্ষা মৌসুম শুরু হবে এ কারণে বড় ধরনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ডেই ঈদের পর একযোগে অভিযান শুরু করবো।’

তিনি বলেন, ‘যেসব ওয়ার্ডে গত বছর বেশি রোগী পাওয়া গেছে— সেসব ওয়ার্ডে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া হবে। যেসব ওয়ার্ডে ১০ জনের বেশি রোগী পাওয়া যাবে, সেখানে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

জনসচেতনতা বাড়াতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে উল্লেখ করে ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে এ কার্যক্রমে সব শ্রেণি পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। এ লক্ষ্যে কয়েকটি বড় কর্মসূচিও নেওয়া হবে।’ এ ছাড়া নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এ বছর মোবাইল কোর্ট অনেক বেশি কঠোরতা দেখাবে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা গেছে,  প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোসহ অন্যান্য নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ঈদের পর থেকে ব্যাপক ক্যাম্পেইন চালাবে তারা। গত বছর মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) প্রযুক্তি আমদানি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর তা ব্যবহার করা না হলেও এ বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে ডিএনসিসি সরাসরি বিটিআই আমদানি করবে। ঈদের পরেই বিটিআই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি। এর বাইরে লার্ভা নিধনের ওষুধ ছিটানোর জন্য অত্যাধুনিক হুইলবারো মেশিন আনার উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতবছর আমরা দেখেছি— হঠাৎ করেই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ কারণে এবার আর মৌসুম আসার অপেক্ষা না করে ঈদের পর থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে ক্যাম্পেইন শুরু করবো।’ এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গু নিধনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে এমন চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ ও অন্যান্য বস্তু নগদ টাকার বিনিময়ে কেনা হবে বলেও জানান মেয়র।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন থেকে অনেক কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনার অভাবে পর্যাপ্ত সুফল পাওয়া যায় না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণের অনেকগুলো প্রক্রিয়া রয়েছে— যার মধ্যে একটিমাত্র হচ্ছে লার্ভা নিধন করার ওষুধ ছিটানো। আমাদের সিটি করপোরেশনগুলো এই কাজটিতেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেয়।’ তিনি বলেন, ‘মৌসুমের আগে এবং শুরুতে লার্ভা নিধন উপকারী হলেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক বা পূর্ণাঙ্গ মশা মারতে হয়।’ গবেষণামূলক কার্যপদ্ধতি ছাড়া ডেঙ্গু নিধনের কর্মসূচিগুলো খুব বেশি উপকারী হবে না বলেও জানান কবিরুল বাশার।