প্রাথমিক নিয়োগে বড় কেলেঙ্কারি ধরল সিবিআই, অসাধু চক্রের তথ্য কলকাতা হাইকোর্টে

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার বড় চক্রের হদিশ দিল সিবিআই। যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। এই রিপোর্টের সঙ্গে সিবিআই যুক্ত করেছে চার্জশিটের কপি। সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টকে জানিয়েছে, ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল। আর সেটাকেই ঢাল করে কাজ করছিল চক্রটি। ওই চক্রের মাধ্যমেই ৩১০ জন অযোগ্য প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে জমা পড়েছে ওই রিপোর্ট। এবার তা নিয়ে পরবর্তী শুনানিতে আদালত পদক্ষেপ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই চক্রে অনেকেই যুক্ত ছিল। তাদের বিষয়ে জমা দেওয়া রিপোর্ট সব উল্লেখ করা হয়। এই বিষয়ে সিবিআইয়ের বক্তব্য, কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল এবং কয়েকজন প্রভাবশালী এই চক্রে জড়িত ছিল। তাঁদের অশুভ আঁতাত এই কাজ করতে সাহায্য করেছিল। তাঁরা বেআইনি পথে চাকরি পাইয়ে দিয়ে বিপুল অর্থ কামিয়েছিল। গোটা ব্যাপারটিই একটা চক্র তৈরি করেছিল। সিবিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, তাপস মণ্ডল তাঁর সাব এজেন্টদের মাধ্যমে শুধুমাত্র টিচার্স ট্রেনিং কলেজের মালিকদের কাছ থেকে অবৈধ পথে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন।

আরও পড়ুন:‌ কাঁথির পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ জঙ্গিদের, রামেশ্বরম কাফে বিস্ফোরণে নয়া মোড়

এদিকে এই চক্রে বেশ কিছু এজেন্ট কাজ করত। যাদের মাধ্যমে টাকা উঠে আসত। এই চক্র আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে। এই কাজ করতে তাপস মণ্ডল তাঁর ৮ জন এজেন্ট রাখেন। যাদের মাধ্যমে ১৪১ জনের কাছ থেকে ৪ কোটি ১২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছিলেন তাপস মণ্ডল। আর কুন্তল ঘোষকে ৫ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তাপস মণ্ডল। সেটাও এই চক্রের মাধ্যমেই। আবার একই কায়দায় ও একই সময়ে কুন্তল ঘোষ তাঁর তিনজন এজেন্টের মাধ্যমে ৭১ জন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন বলে সিবিআইয়ের দাবি। তবে এই বিষয়ে এখনও আদালত কিছু বলেনি।

অন্যদিকে সিবিআই যে তথ্য পেয়েছে, ওই চক্র www.wbtetresults.com নামে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলে। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টেট পরীক্ষায় অকৃতকার্য প্রার্থীদের পাশ করেছে বলে দেখানো হতো। আসল ওয়েবসাইটের মতোই দেখতে ছিল প্রতারণা করার জন্য তৈরি ওই ওয়েবসাইট। ভুয়ো ইমেল আইডি থেকে মেল পাঠানো হতো। ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকে পাঠানো হতো। এরা আসলে সবাই ফেল করা প্রার্থী। তারপর পুরো কাজটি করা হতো। ২০১৭ সালে ৭৫২ জন চাকরিপ্রার্থীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই অযোগ্য প্রার্থী। ওই ৭৫২ জনের মধ্যে ৩১০ জনকে চাকরি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। গোটা প্রক্রিয়াটি এভাবেই ঘটেছিল চক্রের মাধ্যমে।