HT Bangla Exclusive: ভোটের সাতকাহন- ও কিছুই জানে না, মেকআপ দিয়ে মেকওভার হয় না, রচনাকে বার্তা লকেটের

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বঙ্গ রাজনীতিতে সব থেকে চর্চিত জেলার নামই ছিল হুগলি। অবশ্য সাম্প্রতিতকালে সেই চর্চায় ভাগ বসিয়েছে মেদিনীপুরও। কারণ সেখান থেকেই এতদিন লোকসভায় জিততেন দিলীপ ঘোষ। এছাড়া বিরোধী দলনেতাও জিতেছেন নন্দীগ্রাম থেকে। তবে লোকসভা ভোট আসলেই বারবার বাংলার মানুষের মুখে উঠে আসে হুগলির প্রসঙ্গ, কারণ অবশ্যই সিঙ্গুর। এই মাটি থেকেই আন্দোলন করে সিপিআইএমের ৩৪ বছরের শাসনে দাঁড়ি টেনে দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর সেখান থেকে লোকসভায় জিততেন ডাঃ রত্না দে নাগ। কিন্তু ২০১৯ সালেই হুগলিতে হয় পালাবদল, সকলেই চমকে যান সেখানকার মানুষ তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করে বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়কে জেতানোয়। এবারে সেই আসনে রয়েছে হাড্ডাহাড্ডি টক্কর। সম্মুখ সমরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যারে প্রার্থী দিদি নম্বর ওয়ান খ্যাত রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন-CV Ananda Bose: হোটেলে নৃত্যশিল্পীকে ‘যৌনহেনস্থা’ রাজ্যপালের, এবার রাজভবন অভিযান করবে TMC

কদিন আগেই হুগলিতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সভা করে গেছেন স্নেহের লকেটের জন্য। বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে যখন লকেট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন, তখন বিজেপির এত রমরমা ছিল না বাংলায়। তবুও লড়াইয়ের মাটিতে ছাড়েননি। অনুব্রত মণ্ডলের ডেরায় হারার পর এক্কেবারে কঠিন কেন্দ্র হুগলি থেকে জিতেই সংসদে গেছেন লকেট। এবারও কেমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাঁর সামনে, HT বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন হুগলি থেকে গতবার ৭৩ হাজার ভোটে জেতা বিজেপির সাংসদ।

আরও পড়ুন-Narendra Modi Asset: বাড়ি-গাড়ি নেই, আছে ৪ সোনার আংটি! ‘কোটিপতি’ মোদীর ৫ বছরে আয় কত টাকা বেড়েছে?

প্রশ্ন –  এবার লড়াই কতটা কঠিন, সামনে তো রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়?

লকেট চট্টোপাধ্যায়- সব লড়াই চ্যালেঞ্জিং, কারণ লড়াই শব্দটাই চ্যালেঞ্জিং। তবে ওর সঙ্গে কোনও লড়াই নয়। রচনা তো কিছুই জানেই না। ওকে তো চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, লড়াই তো দুর্নীতি নম্বর ওয়ানের বিরুদ্ধে।

প্রশ্ন- কেমন সাড়া পাচ্ছেন যখন নিজের কেন্দ্রে যাচ্ছেন? আপনাকে প্রধানমন্ত্রী কি বললেন?

লকেট চট্টোপাধ্যায়- নরেন্দ্র মোদীকে দুহাত তুলে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষ তৈরি রয়েছে। মানুষের খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। সভায় এসে মোদীজি বলেছেন, তুমি জিতে আসো সংসদে, আমার আশীর্বাদ আছে। 

প্রশ্ন- সন্দেশখালিকাণ্ড কোনও ফ্যাক্টর হবে?

লকেট চট্টোপাধ্যায়- এটা আগেও ছিল। ২০১৫ থেকেই মহিলাদের নির্যাতন করে আসছে তৃণমূল। মালদহ, কাকদ্বীপ, সব জায়গায় হয়েছে। সন্দেশখালিতে যা হয়েছে তার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমা চাওয়া উচিত, সেখানে উনি শেখ শাহজাহানকে আড়াল করছেন।

প্রশ্ন- সিঙ্গুর আন্দোলনেই পালাবদল শুরু বাংলায়। ফের সেই মাটি থেকে জিতলে কি করতে চান?

লকেট চট্টোপাধ্যায়- সিঙ্গুরের মানুষের সঙ্গে তৃণমূল বেইমানি করেছে, সিঙ্গুরে টাটাদের সঙ্গেও বেইমানি করেছে। সেই জন্য আদালত বলেছে টাটাকে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এত জট কাটিয়ে ফেলছেন, আর এতদিনে মুখ্যমন্ত্রী, সিঙ্গুরে জট কাটাতে পারলেন না? আমাদের সরকার এলে এখান থেকেই শিল্প শুরু হবে।

প্রশ্ন- রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দাঁড় করানোয় কি আপনার কাজ সহজ হয়ে গেল? 

লকেট চট্টোপাধ্যায়- আমি তো তৃণমূলকে দেখেছি, মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে শিখেছি অনেক কিছু। রাজনীতিতে তিনি অনেকটা জুয়া খেলার মতো প্রার্থী দিয়েছে। যেখানে গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে সেখানে বাইরে থেকে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। মিমি,নুসরত তো ছিল, জীবনে সংসদে যায়নি। এটা মানুষকে বোকা বানানোর ধান্দা। এমন লোককে নেওয়া উচিত যে সব কিছু ত্যাগ করে আসবে এবং মানুষকে পরিষেবা দেবে ২৪ ঘন্টা। মেকআপ দিয়ে কখনও মেকওভার হয়না, রাজনীতিতে।

প্রশ্ন- লোকসভায় নিয়োগ দুর্নীতি আদৌ প্রভাব ফেলতে পারে?

লকেট চট্টোপাধ্যায়- বাংলায় মানুষের মধ্যে চোরা স্রোত বইছে, তৃণমূলকে ভোট দেওয়া যাবে না। সদ্য বিবাহ হয়েছে, সেও বিধবা ভাতা পাচ্ছে। কারোর নামে প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনায় রিপোর্ট চলে গেছে টাকা পেয়েছেন বলে, কিন্তু কেউ টাকা পায়নি। ভাবুন পৌরসভার চেয়ারম্যান নাকি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছে।

হুগলির মাটি বরাবরই লড়াইয়ের মাটি। সিঙ্গুর থেকেই রাজ্যে বাম শাসনের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে লড়াই কিন্তু খুব সহজ নয় তিনটি কারণে। প্রথমত এই লোকসভার সাতটি কেন্দ্রেই গত বিধানসভায় জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দ্বিতীয়ত রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তৃতীয়ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। তাই শেষ বিচারে যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তা বলাই বাহুল্য। পঞ্চম দফায় ২০ মে এখানে ভোটগ্রহণ। ফলাফল জানতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে সেই ৪ জুন অবধি।