Titas Sadhu Exclusive: U19 Womens T20 World Cup Winning Cricketer Dreams To Get Team In WPL, Know In Details

সন্দীপ সরকার, চুঁচুড়া: হুগলির চুঁচুড়ার কলেজ রোড। ঢিল ছোড়া দূরত্বে চুঁচুড়া জেলা আদালত। সেখানে সারাদিন বিভিন্ন রকম মানুষের জমায়েত। অথচ কলেজ রোড বরাবরের নির্ঝঞ্ঝাট। যদিও গত সপ্তাহখানেক ধরে আপাত শান্ত পাড়া সারাদিন গমগম করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের যাতায়াত। স্থানীয় ক্লাব কর্তাদের আনাগোনা। সকলের হাতে ফুলের তোড়া। উত্তরীয়। সঙ্গে হয়তো বিভিন্ন স্মারক।

কারণ, এই পাড়াতেই বসবাস তিতাস সাধুর (Titas Sadhu)। মহিলাদের অনূর্ধ্ব ১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (U19 T20 World Cup) চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের সদস্য। ফাইনালের সেরা। তাঁর বোলিং দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। বিশ্বকাপ জিতে ফেরার পর থেকে তিতাসের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। সংবর্ধনার প্লাবন। শুভেচ্ছাবার্তার বন্যা। তারই ফাঁকে এবিপি লাইভকে ডানহাতি পেসার বলছিলেন, ‘অনেক দিন ধরে এই স্বপ্ন দেখছিলাম যে, আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হব। সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। আমি  আপ্লুত।’ যোগ করলেন, ‘এত মানুষের উন্মাদনা। বোঝা যাচ্ছে সকলে মহিলা দলের খেলা দেখেছেন। মহিলা ক্রিকেটে এটাই প্রথম বিশ্বকাপ জয়। আশা করছি এর পরে মহিলা ক্রিকেট নিয়ে সকলের আগ্রহ আরও বাড়বে।’

বিশ্বকাপ জয়ের পর জীবন কতটা পাল্টেছে? ‘জীবনের বাইরের দিকগুলো পাল্টেছে। অনেক বেশি লোক খোঁজখবর নিচ্ছেন। ভালবাসছেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার সময় যে মানুষগুলো বিমানবন্দরে ছাড়তে গিয়েছিল, তাদের ভালবাসা একই রয়েছে। এই লোকগুলোই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,’ পরিণত গলায় বলছিলেন তিতাস।

মহিলা ক্রিকেটে ইংল্যান্ড বরাবরের শক্ত গাঁট ভারতের। ফাইনালের আগে কি স্নায়ুর চাপে ভুগছিলেন? তিতাসের জবাব চমকে দেওয়ার মতো। বলছেন, ‘আমরা জানতাম ফাইনালে পৌঁছেই আমরা ইতিহাস তৈরি করেছি। এ-ও জানতাম যে, ফাইনালের ওই তিন ঘণ্টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো আমরা একসঙ্গে আর কোনওদিন কোনও ম্যাচ খেলব না। তাই ওই তিন ঘণ্টা মাঠে উপভোগ করার লক্ষ্যে নেমেছিলাম। আনন্দ করার জন্য নেমেছিলাম।’ যোগ করলেন, ‘আমি বেশি কিছু ভাবিনি। শুধু প্রাথমিক ব্যাপারগুলোয় জোর দিচ্ছিলাম। ধারাবাহিকভাবে সঠিক লাইন-লেংথে বল করেছিলাম। ফিল্ডারদের কাছেও খুব সাহায্য পেয়েছি।’

তবে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পিচ দেখে বেশ অবাক হয়েছিলেন বঙ্গকন্যা। ‘আমরা জানতাম ওখানে পেস বোলিং সহায়ক উইকেট হবে। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ওই ধরনের পিচ বানিয়ে প্রস্তুতি সেরেছিলাম। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে দেখি, ওখানকার উইকেট ব্যাটিং সহায়ক। শুধু বাড়তি বাউন্স ছিল। আমরা অনেক আগে পৌঁছে গিয়েছিলাম। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছিলাম। তাই আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে সড়গড় হয়ে উঠেছিলাম। যে কারণে বিরাট সাহায্য পেয়েছি,’ বলছিলেন তিতাস।

ছোট থেকেই খেলার সঙ্গে যুক্ত। বাড়িতেও খেলার পরিবেশ। বাবা রণদীপ সাধু অ্যাথলিট ছিলেন। নিজেই অ্যাকাডেমি চালান। তিতাসের ক্রিকেটে আসাটা অবশ্য বেশ অদ্ভুতভাবে। বলছিলেন, ‘বাড়ির পাশেই রাজেন্দ্র স্মৃতির সঙ্গে আমাদের ভীষণ ভাল যোগাযোগ। এখানে ক্রিকেট ম্যাচ হলে দেখতে আসতাম। স্কোরবোর্ড সামলাতাম। মাঠে জল দিতাম। তারপর এখানকার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হই। সেই থেকে ক্রিকেট শুরু।’ যোগ করলেন, ‘স্কুলে দৌড়, সাঁতার, টেবিল টেনিস, সবই খেলেছি। তবে পরে ক্রিকেটের প্রতি প্রেম গাঢ় হয়। বাড়ির কখনও কেউ খেলতে জোর করেনি। বারণও করেনি।’

শুরুতে অলরাউন্ডার হতে চেয়েছিলেন। তবে পরে পেস বোলিংয়ে মনোনিবেশ করেন। প্রিয় ক্রিকেটার? তিতাস বলছেন, ‘হার্দিক পাণ্ড্য।’ তবে অনুপ্রেরণা ঝুলন গোস্বামী। ‘ঝুলনদি বিশাল বড় নাম। ওঁর সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি, উনি আমাদের মেন্টর ছিলেন, সেটাই বিরাট গর্বের মুহূর্ত। সব সময় পাশে থেকেছেন ঝুলনদি। প্রত্যেক ম্যাচের আগে টেক্সট করতেন,’ বলছিলেন বঙ্গকন্যা।

ভারত-ইংল্যান্ড ফাইনালের আগে অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী অ্যাথলিট নীরজ চোপড়ার কথা শুনে গোটা দলের শরীরী ভাষা পাল্টে গিয়েছিল। তিতাসের কথায়, ‘নীরজ চোপড়া বলছিলেন, পদক নিয়ে পোডিয়ামে দাঁড়ানো, পিছনে জাতীয় সঙ্গীত বাজছে, হাতে জাতীয় পতাকা, সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। ফাইনালের আগে সেই অভিজ্ঞতার কথা শুনে গায়ে কাঁটা দিয়েছিল। আমাদের জেদ তৈরি হয়েছিল, আমরাও পারব। ট্রফিটা জিততে মরিয়া ছিলাম।’

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরার পর আমদাবাদে সচিন তেন্ডুলকর গোটা দলকে সংবর্ধনা দেন। কী বললেন মাস্টার ব্লাস্টার? ফাইনালের সেরা ক্রিকেটার বলছেন, ‘সচিন স্যার বলেছেন, বিদেশে গেলে কী কী শিখলে, পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে কী জানলে, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’ উইকেটের এক জায়গায় লাগাতার বল করে যাওয়াকে নিজের সেরা অস্ত্র মনে করেন।

ক্রিকেট মাঠের বাইরে তিতাসের কোন দিকটা কেউ জানেন না? হাসতে হাসতে চুঁচুড়ার ক্রিকেটার বলছেন, ‘আমি খুব বাজে নাচি। ক্রিকেটের সকলেই সেটা জানে।’ যোগ করছেন, ‘অবসর সময়ে গল্পের বই পড়ি। সিনেমা দেখি। চাইনিজ খেতে খুব ভাল লাগে আমার।’

১৩ ফেব্রুয়ারি মহিলাদের আইপিএলের নিলাম। তিতাসের কথায়, ‘আশা করছি মহিলাদের আইপিএল থেকে আরও বেশি ক্রিকেটার উঠে আসবে। নিজের প্রতিভা তুলে ধরার অনেক বড় মঞ্চ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে পারব। অনেক কিছু শিখতে পারব।’

সম্পূর্ণ ভিডিও সাক্ষাৎকার দেখুন: 

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্মারক হিসাবে কী সংগ্রহ করেছেন? ‘ম্যাচের বলটি পাইনি। তবে রেপ্লিকা বল পেয়েছি। সকলকে দিয়ে সেই বলে সই করিয়ে এনেছি। একটা জার্সিতেও সকলের সই নিয়েছি,’ বলছিলেন তিতাস। তাঁর হাতে তখন খেলা করছে লাল বল। সিমের ওপর হাত রেখে বললেন, ‘সামনে আইপিএলের নিলাম। আশা করছি দল পাব। ২০২৫ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। জাতীয় সিনিয়র দলে সুযোগ পেতে চাই।’

আরও পড়ুন: কলকাতা বইমেলায় তারকা অতিথি, মেলার মাঠে হাজির স্পিডস্টার উমরন