শিক্ষক গ্রেফতার ও বাড়িতে হামলায় উদ্বেগ এইচআরএফবির

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার এবং তার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।

একই সঙ্গে সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দাবি জানিয়েছে মানবাধিকারের এই সংস্থাটি।

রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার গ্রামের বাড়ি থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা মামলায় কয়া চাইল্ড হ্যাভেন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহকে গ্রেফতার করা হয়।

তবে তার পরিবারের ভাষ্যমতে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এ ছাড়া ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষকের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে তার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

গ্রেফতার শিক্ষকের স্ত্রী স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিলুফার ইয়াসমিন লিলিকে মহিলা জামায়াতের সদস্য হতে এবং ওই স্কুলে মহিলা জামায়াতের মাহফিল করতে একটি গোষ্ঠী চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিলুফার ইয়াসমিন জানান, তিনি এতে রাজি না হওয়ায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার স্বামীর বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে মামলা দিয়ে তাকে শায়েস্তা করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ফোরাম মনে করে, এ ঘটনা শুধু উক্ত শিক্ষক পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নয়, বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সাম্প্রদায়িকতা বিকাশের ঘাঁটি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার এক বিশাল চক্রান্তের অংশ। একই সঙ্গে এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনাও নয় বলে ফোরাম মনে করছে।

তিনি বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে দেশের বিভিন্ন বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের সঙ্গে প্রায় একই ধরনের হয়রানিমূলক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের আসামি করে মামলা হচ্ছে। প্রথমে মামলা না করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হশিক্লেষক মামলা গ্রহণ করা হলে শিক্ষকদের হয়রানি কিছুটা হলেও হ্রাস পেতো।

এ বিষয়ে ফোরাম মনে করে, এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত না হওয়ায় এমন অনাকাঙ্খিত ও অগ্রহণযোগ্য ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে। যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে উসকানি প্রদান করছে, নানাভাবে হেনস্তা করছেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিকাশের অপচেষ্টায় লিপ্ত-তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন, এমনকি বিভিন্নভাবে সুরক্ষা ও প্রশ্রয় পাচ্ছেন।

এইচআরএফবি জানায়, একজন শিক্ষকের প্রতি এমন আচরণ যেমন অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত, তেমনি দেশে ক্রমবর্ধমান হারে ধর্মান্ধতা সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের গভীরতর ষড়যন্ত্রের অশুভ দৃষ্টান্ত।  ফোরাম সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ আইন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।