India & Japan bilateral relation: চিনের ডানা কাটতে নয়া প্ল্যান! তাতে ‘ভারত অপরিহার্য’, মোদীর সামনে বললেন কিশিদা

ভারত সফরে এসে মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিকল্পনার উন্মোচন করলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। যে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ভারতকে ‘অপরিহার্য সহযোগী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। সেই নয়া পরিকল্পনার সাফল্যের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে মত জাপানের। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, চিনের বাড়বাড়ন্ত রুখতে সেই পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

কিশিদার দু’দিনের সফরে মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিকল্পনা যাবতীয় লাইমলাইট কেড়ে নিলেও সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, ব্যবসা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন দুই রাষ্ট্রনেতা। সেইসঙ্গে ইউক্রেন সংকট, জি২০-র সভাপতিত্ব (ভারত সভাপতিত্ব করছে) ও জি৭-র সভাপতিত্ব (জাপান সভাপতিত্ব করবে) নিয়ে আলোচনা হয়েছে মোদী এবং কিশিদার।

সেই বৈঠকের পর মোদী জানান, ভারত এবং জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পক্ষে রয়েছে দুই দেশ। যে দুই দেশই নির্দিষ্ট আইন মেনে চলে। সেইসঙ্গে দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা সামগ্রী, প্রযুক্তি, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য ও ডিজিটাল ক্ষেত্রে সহযোগিতার মতো বিষয়গুলিও উঠে এসেছে বলে জানান মোদী।

তাঁর কথায়, ‘সেমিকন্ডাক্টর ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি জোগানের ক্ষেত্রে ভরসাযোগ্য পদ্ধতির গুরুত্ব নিয়ে আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। গত বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম যে পরবর্তী পাঁচ বছরে ভারতে জাপানি বিনিয়োগের পরিমাণ পাঁচ ট্রিলিয়ন ইয়েনে পৌঁছে যাবে। দারুণ ছন্দ বজায় রেখে সেই লক্ষ্যমাত্রার দিকে যেভাবে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়েছে, সেই বিষয়টি অত্যন্ত সন্তোষজনক।’

মোদীর সুরেই ভারত-জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর জোর দিয়ে কিশিদা জানান, বিশ্ব যখন একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে ভারত এবং জাপান কী ভূমিকা পালন করতে পারে, তা নিয়ে মোদীর সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছে। তবে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের আগ্রাসী আচরণ নিয়ে দু’দেশের তরফে প্রকাশ্যে একটিও শব্দ খরচ করা হয়নি। 

আরও পড়ুন: Modi and Kishida enjoying golgappa: মোদীর সঙ্গে ফুচকায় কামড় বসালেন কিশিদা! জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের কিছু ঝলক একনজরে

তবে সেই বিষয়টি যে মোদী এবং কিশিদার আলোচনায় উঠে এসেছে, তা কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভারতের বিদেশসচিব। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় যে সমস্যাগুলি আছে এবং সেই সমস্যার সমাধানে ভারত, জাপান-সহ একই মানসিকতার দেশগুলি কীভাবে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারে ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে তাঁদের (মোদী এবং কিশিদা) আলোচনা হয়েছে।’

কিশিদার মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিকল্পনা

২০০৭ সালে ভারতের সংসদে ঐতিহাসিক ভাষণে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তার উপর ভিত্তি করে মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিকল্পনার উন্মোচন করেছেন কিশিদা। সেই পরিকল্পনার ক্ষেত্রে চারটি মূল স্তম্ভও চিহ্নিত করেছেন – শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য নীতি, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছন্দে সমস্যার সমাধান, বহুস্তরীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাড়তি জোর ও সমুদ্র থেকে আকাশের সুরক্ষিত ব্যবহার। খাদ্যসুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য এবং সাইবার সুরক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টিও তুলে ধরেন কিশিদা। তাতে উত্তর-পূর্ব ভারত, সার্বিকভাবে ভারত এবং বাংলাদেশের আরও আর্থিক উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত। 

সরাসরি চিনের প্রসঙ্গ উত্থাপন না করেই জাপানের প্রধানমন্ত্রী জানান, যে শক্তিগুলি একতরফা স্বাভাবিক অবস্থা পালটে দিচ্ছে, সেই শক্তিগুলির বিরোধিতার লক্ষ্যে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অ়ঞ্চলের জন্য জাপান নয়া পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সেইসঙ্গে ওই পরিকল্পনার আরও কয়েকটি লক্ষ্য স্পষ্ট করে দেন কিশিদা – নির্দিষ্ট আইন মেনে এগিয়ে চলা; আর্থিকভাবে চাপে ফেলার যে প্রবণতা আছে, সেটার বিরোধিতা করা এবং এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা, যা কোনও একটি দেশের নির্ভরশীল হবে না।

আর সেই মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিকল্পনার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান কিশিদা। তিনি জানান, ওই ক্ষেত্রে ভারত একেবারে মধ্যমণি হয়ে থাকবে। শুধু তাই নয়, ‘আমাদের মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিকল্পনা’ বলেও উল্লেখ করেন কিশিদা। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আমাদের মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, (দক্ষিণ কোরিয়া), কানাডা, ইউরোপ এবং অন্যদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও ভালো করবে জাপান। অবশ্যই এক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত অপরিহার্য।’

(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)