একের পর এক মন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতায় সরব, তবে কি অন্য ভাবনা ফিরহাদের মনে?

‘বহিষ্কৃত’ তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে সেন্সর করেছে দল। তার পরও রাজ্য মন্ত্রিসভার একের পর এক মন্ত্রির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কখনও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, কখনও উদয়ন গুহর মন্তব্যের সমালোচনা করছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। তবে কি তাঁর মনে চলছে অন্য কিছু?

বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপিতে যোগদান করতে পারেন বলে জল্পনা ছড়িয়েছিল। সেই সম্ভাবনা পত্রপাঠ খারিজ করেছিলেন ফিরহাদ। তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরলেও তাঁর ক্ষমতা খর্ব হয়েছে। মমতার অত্যন্ত আস্থাভাজন বলে পরিচিত ফিরহাদের হাতে এখন শুধু রয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সঙ্গে কলকাতার মেয়র পদে আসীন রয়েছেন তিনি। এর পরও ফিরহাদের সঙ্গে সাম্প্রতিককালে তৃণমূলের রসায়নের গোলমাল দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে সরাসরি মন্তব্য যখন এড়িয়ে চলছেন দলের প্রায় সব নেতা তখন ফিরহাদ একাধিকবার বলেছেন, এই পার্থদাকে আমি চিনতাম না। আমরা অনেকদিন একসঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলাম। দুর্নীতি হয়ে থাকলে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করি। শেষবার গত ১৬ মার্চ একথা বলেন তিনি। ১৭ মার্চ কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠকে ফিরহাদকে সেন্সর করা হয়। তার পর ফিরহাদ এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে…’ কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতে ফের নিজের ফর্মে ফিরহাদ। শনিবার রাজ্যের ২ মন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা করলেন তিনি।

দলের স্বার্থে বেআইনি ভাবে চাকরি দিয়েছিলেন বাবা কমল গুহ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয় গুহর এই মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘ও (উদয়ন) পাগলের মতো কী বকেছে জানা নেই। চিরকুটে কখনও লোক ঢোকানো যায় না’।

এদিন সিপিএমকে সামাজিক বয়কটের ডাক দেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তার প্রতিক্রিয়ায় ফিরহাদ বলেন, ‘সিপিএম বাড়ির যদি কেউ অসুস্থ হয়, কাউন্সিলর, বিধায়ক হিসাবে আমার কর্তব্য দৌড়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা। সিপিএমের পরিবারের কেউ মারা গেলে তার সাথে শ্মশানে যাওয়া আমার মানবিক কর্তব্য। সামাজিকভাবে বয়কট এসব সিপিএমরা করত। আমরা এসবে বিশ্বাস করি না।’

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি তৃণমূলের দুর্নীতি ও বিরোধীদের প্রতি কট্টরপন্থী অবস্থান মানিয়ে নিতে পারছেন না ফিরহাদ? কেন তাঁকে বারবার নিজের মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হচ্ছে? তবে কি অন্য কোনও ভাবনা চলছে ফিরহাদের মনে? তৃণমূলকে অতীত করে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছেন তিনি। চলছে তারই কলকে সাজানোর পর্ব?