দেশ পরিচিতি: মিয়ানমার

সামরিক জান্তা সরকার পরিচালিত মিয়ানমারকে দীর্ঘকাল অচল রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হত। দেশটি বার্মা নামেও বহুল পরিচিত। ১৯৬২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা দীর্ঘ ৪৭ বছর জান্তা সরকারের শাসনাধীন ছিল দেশটি।

দীর্ঘ শাসনকালে দেশটির জান্তা সরকার সব ধরনের ভিন্নমত দমন করে আসছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ নিন্দা জানিয়ে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

২০১০ সালে ধীরে ধীরে দেশটিতে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হতে থাকে, এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালে নির্বাচন হয় দেশটিতে। পরের বছর সাবেক বিরোধী নেত্রী অং সান সু চি’র নেতৃত্বে একটি সরকার গঠন হয়।

কিন্তু ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে পরিচালিত সামরিক অভিযানে দেশটির রাখাইন রাজ্যের লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া বিপুল মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। সরকারের এই কর্মকাণ্ডকে ‘জাতিগত নিধনের নথিভুক্ত উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যা দেয় জাতিসংঘ। 

এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদাহানী হয় দেশটিতে নির্বাচনে জয়লাভ করা নবগঠিত সরকারের। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চি ও তার সরকারের পতন হয়।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • নাম: রিপাবলিক অব দ্য ইউনিয়ন অব মিয়ানমার
  • রাজধানী: নেপিদো
  • জনসংখ্যা: ৫ কোটি ৩০ লাখ
  • মুদ্রা: কিয়াট
  • আয়তন: ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫২ বর্গ কিলোমিটার
  • ভাষা: প্রধান ভাষা বার্মিজ ছাড়াও বেশ কয়েকটি ভাষা প্রচলিত
  • ধর্ম: সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ
  • গড় আয়ু: পুরুষদের ৬৪ বছর ও নারীদের ৬৯ বছর

মিয়ানমার জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং। ছবি: রয়টার্স

নেতৃত্ব

সামরিক জান্তা সরকারের নেতৃত্বে থাকা দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে। সামরিক অভ্যুত্থানে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি’কে উৎখাত করে ২০২১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত হন তিনি।

সামরিক বাহিনীর সাবেক জেনারেল থেকে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া মিন্ট সোয়ে মূলত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করেন, মূল ক্ষমতা চর্চা করেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং, যিনি সামরিক অভ্যুত্থানেরও মূল হোতা। ২০১৬ সালে সামরিক শাসনের পতনের পর থেকে দেশটির স্টেট কাউন্সিলরের দায়িত্বে ছিলেন অং সান সু চি।

অং সান সু চি। ছবি: রয়টার্স

২০১৭ সালে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জাতিগত নিধনের দায়ে সু চি সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার সম্মুখীন হয়। ২০২১ সালে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ আরও বেড়ে গেলে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চি সরকার ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে উৎখাত করে দেশটির সামরিক বাহিনী।

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের শাসনামলেও সংবাদমাধ্যমের তেমন একটা স্বাধীনতা ছিল না। ছবি: রয়টার্স

সংবাদমাধ্যম

সংবাদমাধ্যমে সামরিক শাসনের কঠোর অবস্থা কিছুটা শিথিল হতে শুরু করেছিল ২০১১ সালে। তবে ফ্রান্সভিত্তিক সংস্থা ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ বলছে, ২০১৬ সালে দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের শাসনামলেও সংবাদমাধ্যমের তেমন একটা স্বাধীনতা ছিল না।  

এখনও দেশটির সংবাদমাধ্যম ও সম্প্রচারমাধ্যমগুলোতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’ বিপুলভাবে অনুশীলন করা হয়ে থাকে।

২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযানে লাখো রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালায়। ছবি: রয়টার্স

দেশটির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

১০৫৭: রাজা আনাওরাতা থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্যাগান রাজ্যে প্রথম মিয়ানমার রাষ্ট্র গঠন করেন।

১৫৩১: টুংগু রাজবংশ একত্রিত হয়ে বার্মা নামক দেশ গঠন করে।

১৫৮৫-৮৬: ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায় বার্মা।

১৯৪৮: বার্মা স্বাধীন হয়।

১৯৬২: একদলীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার নামে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা সরকার।

১৯৯০: ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও নির্বাচনের ফলাফল উপেক্ষা করে জান্তা সরকার।

২০১১: নির্বাচনের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের হাতে নামমাত্র ক্ষমতা হস্তান্তর করে সামরিক বাহিনী।

২০১৫: নির্বাচন হয়। অং সাং সু চি’র নেতৃত্বাধীন বিরোধীদল এনএলডি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে।

২০১৮: গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমার সরকারকে অভিযুক্ত করে জাতিসংঘ।

২০২১: নির্বাচিত সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়।