Ht Bangla exclusive: ‘শাশুড়ি বউমার গল্পই যেন ফিরে আসে র‌্যাগিংয়ে’, যন্ত্রণার এপিঠ ওপিঠ মূল্যায়নে মনোবিদ পুষ্পা মিশ্র

যাদবপুরের র‌্যাগিংকাণ্ড ঘিরে উত্তাল সারা বাংলা। সমাজের সব স্তরেই ছড়িয়ে পড়েছে এই অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ‌। ৯ অগস্ট প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়াকে র‌্যাগিং করার সময় ছাদ দিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু সিনিয়রদের বিরুদ্ধে।‌ ইতিমধ্যে তদন্তে নেমে এই মর্মে গ্ৰেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন পড়ুয়াসহ প্রাক্তনীদের। যাদবপুরে পড়াশোনার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও একদল পড়ুয়া কিছুতেই তাদের হোস্টেল ঘর ছাড়তে চান না। র‌্যাগিংয়ের একটা বড় অংশেও রয়েছে এদের নিয়ন্ত্রণ। যাদবপুরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। তবে সমস্যাটা শুধুই যাদবপুর নয়, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিরই‌‌। ঠিক কোন মানসিকতা কাজ করে এর পিছনে? কেনই বা র‌্যাগিং একটা পরম্পরা হয়ে উঠেছে? এই বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে বিশদে আলোচনা করলেন বিশিষ্ট মনোবিদ চিকিৎসক পুষ্পা মিশ্র।

(আরও পড়ুন: ছাত্র পড়ে যাওয়ার পর ধুয়ে দেওয়া হয়েছিল রক্ত, যাদবপুর কাণ্ডে সামনে আসছে নানা তথ্য)

সাত-আট বছর আগে যাদবপুরের কাউন্সেলিং সেলের সদস্য ছিলেন মনোবিদ পুষ্পা। সে সময় তাদের উদ্যোগে অ্যান্টির‌্যাগিংয়ের প্রচারও বেশ কার্যকর হয়েছিল। কিছুটা হলেও কমেছিল র‌্যাগিং। কথায় কথায় সেই অভিজ্ঞতা জানালেন তিনি‌। ‘সে সময় মেন ক্যাম্পাসে একটা বড় সভা আয়োজন করে র‌্যাগিং সচেতনতা প্রচার করা হয়েছিল। সভার মধ্যে জিজ্ঞেস করলেও কোনও পড়ুয়া সাহস করে মুখ খুলতে পারেননি। প্রত্যেকেই জানায়, ক্যাম্পাসে কোনও র‌্যাগিং হয় না। অথচ সভা শেষ হতেই পুষ্পা মিশ্রের কাছে ছুটে আসেন বেশ কিছু পড়ুয়া। ভয়ে বলতে না পারা পব অভিজ্ঞতাও তাঁকে জানান‌। এমনকী কিছু পড়ুয়াকে আলাদা করে কাউন্সেলিংও করতে হয়।

(আরও পড়ুন: পুলিশকে হস্টেলে ঢুকতে বাধা, যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার প্রাক্তনী)

কেন এই প্রবণতা বছরের পর বছর চলছে? পুষ্পা মিশ্র বলেন, ‘এটাকে একরকমভাবে বলা যায়, ‘আইডেন্টিফিকেশন অব অ্যাগ্রেসর’, অর্থাৎ ঠিক যেভাবে আমাকে অত্যাচার করা হচ্ছে, বড় হয়ে সেটাই রিপিট করছি আমি। যেমনটা শাশুড়ি বৌমার মধ্যে দেখা যায়‌। এছাড়া, অবশ্যই যেটা কাজ করে সেটা হল নিজেকে জাহির করা, নিজের ক্ষমতা ফলাতে পারা। মানুষের মনে অনেক বিষয়ে খারাপ লাগা থাকে। সেগুলোর বিরুদ্ধে যে অ্যাগ্রেশন বা আক্রমণাত্মক মনোভাব তাও সব সময় ঠিকভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না‌। র‌্যাগিং যারা করছে তাঁরা র‌্যাগিংয়ের মাধ্যমে সেগুলো বার করে আনে। 

(আরও পড়ুন: রাজ্যপাল বোসের নির্দেশে JU-র অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হলেন গণিতের অধ্যাপক)

শুধু আইনের জোরে তো র‌্যাগিংয়ের মতো অপরাধ ঠেকানো সম্ভব নয় সব সময়। জুনিয়রদের প্রতি সিনিয়রদের মনোভাবও অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই মনোভাব কেমন হওয়া উচিত? কেমন হলে ক্যাম্পাস সত্যিই র‌্যাগিং মানসিকতা থেকে মুক্ত হয়ে উঠবে? এর উত্তরে মনোবিদ বলেন, ‘সবচেয়ে প্রথমেই প্রয়োজন পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং। র‌্যাগিংয়ে যুক্ত পড়ুয়া বা প্রাক্তনীদের মধ্যে আগের কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা কাজ করে কিনা সেটা জানা জরুরি। সে কোনও হীনম্মন্যতা বোধে ভুগছে কিনা সেটা বোঝা দরকার। সঠিক ও নিয়মিত কাউন্সেলিং করলে এই‌ সমস্যা অনেকটাই দূর করা যায়।‌ এর জন্য একটা কাউন্সেলিং সেল থাকা দরকার। একই সঙ্গে দরকার অ্যান্টি র‌্যাগিং প্রচারও।