ধর্ষণ ও অপহরণের পৃথক মামলায় একই আসামির ২ বার যাবজ্জীবন

রংপুরের পীরগাছায় প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় আবুল কালাম আজাদ নামে এক আসামিকে। এরপর সে আবারও ভিকটিমকে অপহরণ করে আটকে রাখায় পৃথক মামলায় তাকে আবারও যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক রোকনুজ্জামান এ রায় দেন। এ সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার আব্দুল জলিলের ছেলে আসামি আবুল কালাম আজাদ ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এতে ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এ ঘটনায় পীরগাছা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় তদন্ত শেষে পুলিশ আসামি আজাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। দীর্ঘদিন কারাগারে আটক থাকার পর আসামি জামিনে মুক্তি পায় সে। ওই মামলার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে আজাদ আবারও ভিকটিমকে ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর বাড়ি থেকে অপহরণ করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা আবারও বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর পীরগাছা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পারেনি। অন্যদিকে স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করে তার খোঁজ পায়নি। আসামিও অপহরণ করার কথা স্বীকার করেনি।

ধর্ষণ ও সন্তান জন্ম হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি বাদীপক্ষের ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং জেরা শেষে আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে, আসামি কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে মেয়েটিকে ঢাকায় একটি বাসায় আটকে রাখার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। পরে পুলিশের সহায়তায় অপহৃত মেয়েটিকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবুল কালাম আজাদ এক বছরেরও বেশি সময় কারাগারে আটক থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করে।

এরপর আবারও প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে অপহরণ করে আটকে রাখার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শুরু হয়। মামলায় বাদীপক্ষের ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারক আবারও যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

রায় ঘোষণার সময় বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, আসামি প্রতিবন্ধী অসহায় মেয়েকে জোর করে ধর্ষণ করায় মেয়েটি একটি সন্তান জন্ম দেয়। ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়। মামলা চলাকালে আবারও আসামি ভিকটিমকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখে। সাক্ষ্য প্রমাণে ধর্ষণ মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এই মামলাতেও তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলো।

সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন। তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আসামি দুই দফা অপরাধ করেছে। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করছে।’

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এমদাদুল হক প্রধান বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।’