রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছয় সিটের একটি রুম দখল করে রেখেছেন। কক্ষের বাইরে নিজের নাম ও পদবি সংবলিত সাইন বোর্ড লাগিয়ে লালগালিচা বিছিয়ে ও লাখ টাকা মূল্যের সোফাসহ অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে আয়েশি কায়দায় সেখানে বসবাস করছেন।
ছাত্রলীগ সভাপতির এমন বিলাসবহুল জীবনযাপন সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন জানলেও কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা আছে মাত্র ৮৮৮ জনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের দুই ও মেয়েদের একটি আবাসিক হল রয়েছে। দীর্ঘ দিন আবাসন সংকটের কবলে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নয়া হল নির্মাণের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।
তীব্র আবাসন সংকটের মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছয় সিট বিশিষ্ট ৩০৬ নম্বর কক্ষটি একাই দখল করে আছেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া। ওই রুমের সামনে রঙিন সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। যেখানে তার নাম পদবি শোভা পাচ্ছে। রুমের ভেতরে হল কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা ছয়টি বেড সরিয়ে দিয়ে একটি বেড বসানো রয়েছে। রুমের চারদিকে দামি পর্দা আর ঘরের মেঝেতে রয়েছে লালগালিচা।
আর রুমের ভেতরে লাখ টাকারও বেশি দামের আলিসান সোফা বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও রুমের ভেতরে ডেকোরেশন করাও হয়েছে। সেখানে একাই থাকেন পোমেল বড়ুয়া।
হল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অনেক আগেই ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে তার। ওই নেতার নামে কোনও রুমও বরাদ্দ করেনি হল প্রশাসন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়ার পর আর কোনও শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারে না।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু হলে রুম দখল করে আলিসান জীবনযাপন করেন সভাপতি। একইভাবে শহীদ মুখতার এলাহি হলে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীমও ছয় সিটের রুম দখল করে অবস্থান করছেন। তারও ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে। দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের আইন লঙ্ঘন করে দুই হল তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
শুধু তাই নয়, পোমেল বড়ুয়া ও শামীম দুই হলে তাদের একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে অবস্থান করছেন। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো শিক্ষার্থীদের রুম বরাদ্দ দেন। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন সিট বরাদ্দ পাচ্ছেন না। দুই হলের প্রশাসনও তাদের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া দাবি করেন, ৩০৬ নম্বর কক্ষে তার সঙ্গে আরও চার শিক্ষার্থী থাকেন। তারা নাকি ফ্লোরিং করেন।
আর কার্পেট প্রসঙ্গে বলেন, ফ্লোরে ঠান্ডা লাগে এ জন্য চটের বস্তা রঙ করে বসিয়েছেন। তবে সোফা সেটের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হলে আরও অনেকেই থাকেন যাদের নামে বরাদ্দ নেই। বরং একটি বিশেষ মহল তাকে হেয় করার জন্য একটি ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এসব অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই বলেও দাবি তার।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট বিজন মোহন চাকি স্বীকার করেন ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়ার নামে কোন সিট বরাদ্দ নেই। তার রুমে দামি আসবাবপত্র কীভাবে এলো এ সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলেই হল প্রভোস্টদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। একটি হল ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া আরেকটি সাধারণ সম্পাদক শামীমের নিয়ন্ত্রণে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী বলেন, এমন তো হওয়ার কথা নয়, তার পরও বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।