ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান চরমোনাই পীরের

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, ‘যদি এই সরকার অন্যায় ও জুলুমের মাধ্যমে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে চায়, তাহলে আমাদের আহ্বান, এই পাতানো নির্বাচনে কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। আজ দেশ, জাতি ও ইসলামের করুণ অবস্থা। আলেমদের প্রতি আহ্বান জানাই, এই সরকারের সঙ্গে হাত মেলাবেন না।’

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।

বর্তমান রাজনৈতিক সংকট অতিতের যেকোনও সময়ের চেয়ে জটিল ও বহুমাত্রিক উল্লেখ করে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, দেশ আক্ষরিক অর্থেই গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে সীমানার বাইরে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। ভূরাজনীতির জটিলতায় দেশ পরাশক্তির বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতি প্রতিষ্ঠানিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হত্যা করা হয়েছে, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জায়গা নষ্ট করে রাষ্ট্রকেই অকার্যকর করা হয়েছে।

সংলাপে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে তিন দফা প্রস্তাব পেশ করেন তিনি। তিনি বলেন, একতরফা তফসিল বাতিল করে গ্রেফতার করা বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে; বর্তমান বিতর্কিত পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে এবং কার্যকরী সংসদ, রাজনৈতিক সংহতি এবং শতভাগ জনমতের প্রতিফলনের জন্য সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।

সংলাপে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, পাকিস্তানিরাও উন্নয়নের কথা বলতো কিন্তু ভোটের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেনি। আজকের সরকারও উন্নয়নের কথা বলছে কিন্তু জনগণের ভোটের মর্যাদা রক্ষা করতে পারছে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, উদ্দেশ্য বা নিয়ত সৎ থাকলে সমস্যার সমাধান অসম্ভব কিছু নয়। বাংলাদেশের মানুষ বারবার অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। প্রয়োজনে আরও ত্যাগ স্বীকার করবে। কিন্তু এর জন্য নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত নেতৃত্ব চাই। সেই নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।

জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, এখন সম্মিলিতভাবে ডাক দিলে সরকারের অস্তিত্ব থাকবে না। সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার এখন ঠিক করে দিচ্ছে আগামী সংসদে বিরোধী দল কারা হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের এমন লজ্জার উদাহরণ আর হতে পারে না।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আসন্ন নির্বাচন আদতে ইলেকশন নয়, সিলেকশন। গণফোরামের সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে হাসিনা পতনের উৎসব হবে। শিক্ষাবিদ আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য নির্বাচন করতে হচ্ছে, এটা মিথ্যা কথা। সংবিধান কোনও আসমানি কিতাব নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারপাশে যারা থাকেন, তারা তাকে আউলিয়ার স্থানে নিয়ে গেছেন জানিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেন, অনেকে বলছেন জান্নাত তার জন্য ফরজ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় তার বিরুদ্ধে রাজপথে নামাই বিপ্লব বা জিহাদ।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, এই সরকারের সঙ্গে আর কোনও সংলাপ নয়। রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিলস্নাহ আল-মাদানি, মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, এবি পার্টির মহাসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুলস্নাহ কায়সার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা) যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, এনপিডির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের প্রমুখ।