‘যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকারের লড়াই নারীর একার কাজ নয়’

যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকারের লড়াই নারীর একার কাজ নয়। বাংলাদেশে অনেক নীতিমালা ও আইন হচ্ছে। তবে আইনের প্রণয়ন ও প্রয়োগ, জবাবদিহি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সহিংসতার ধরনে পার্থক্য থাকে। সব ধরনের সহিংসতাই প্রতিরোধ করতে হবে।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) এমজেএফ টাওয়ারের আলোক অডিটোরিয়ামে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষকাল (২৫ নভেম্বর ১০ ডিসেম্বর) ২০২৩’ উপলক্ষে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আলোচকরা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল ‘জেন্ডার সমতা অর্জনে সহিংসতা প্রতিরোধ এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় বিনিয়োগ’।

এতে বাংলাদেশে সুইডেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে বলেন, ‘২০২৩ এ এসেও যে নারী ও কন্যা শিশুরা জেন্ডারভিত্তিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বিষয়টি আমাদের অবাক করে। জেন্ডার সমতা অর্জনে আমাদের ঘর থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের মতো সুইডেনও যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। কপ-২৮ এও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকারের লড়াই নারীর একার কাজ নয়। সমাজের সব স্তরের নারী, পুরুষকে এর জন্য কাজ করতে হবে।’

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে কানাডিয়ান হাইকমিশনের কমিশনার লিলি নিকোলস বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক নীতিমালা ও আইন হচ্ছে। তবে আইনের প্রণয়ন ও প্রয়োগ, জবাবদিহি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ। সহিংসতার ভয়ে অনেক তরুণী রাজনীতিতে অংশ নিতে পারে না। সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সবসময় কানাডাকে পাশে পাবে।’

গড়ে প্রতিদিন ১০ জন নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘ঘরে ঘরে কত নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আমরা জানি না। আমরা বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়েও কথা বলি না। আজকের আয়োজনে এই বিষয়টিও আমাদের ধাক্কা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর দিকেও নজর বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে হেলথ বাজেটিংয়ের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সব ধরনের স্টেকহোল্ডার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এনজিওগুলোর সক্ষমতাও বাড়াতে হবে, যেন তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করে যেতে পারে। কারণ সরকারের একার পক্ষে এই কাজগুলো করা সম্ভব নয়।’

সুইডেন দূতাবাসের অর্থায়নে ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পরিচালিত ‘নারীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যে লবণাক্ততার প্রভাব: বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর একটি গবেষণা’ শীর্ষক গবেষণার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফি বিনতে আকরাম।

অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘সহিংসতা প্রতিরোধে নানামুখী ব্যবস্থা প্রয়োজন। কারণ নারীর মাঝেও নানা ভাগ আছে। যেমন- ট্রান্সউইমেন আছেন, সেক্স ওয়ার্কার আছেন। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সহিংসতার ধরনে পার্থক্য থাকে। সব ধরনের সহিংসতাই প্রতিরোধ করতে হবে।’

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ) ডা. উম্মে রুমান সিদ্দিকী, ইউএন উইমেনের প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট শ্রবণা দত্ত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের টিম লিডার (ইনক্লুসিভ গভর্নেন্স ডেলিগেশন) ও ফার্স্ট সেক্রেটারি এনরিকো লরেনজো, বাংলাদেশে কানাডিয়ান হাইকমিশনের হেড অব কোঅপারেশন জো গুডিংস।