দল গোছাচ্ছে আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধকল সামলে এবার দল গোছানোর উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিভাগভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা, উপজেলা ও মহানগর, পৌর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করা, সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা এবং তৃণমূলে অভন্তরীণ কোন্দল বা বিরোধ মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই তৎপরতা চলতি ফেব্রুয়ারি মাস ও আগামী মাস মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক সূত্র।

সূত্রমতে, যেসব জেলা, উপজেলা ও মহানগর ও পৌর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন হয়নি, সেগুলোর সম্মেলন দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্মেলন হলেও এগুলোর যেসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি, সেগুলোও দ্রুত পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা বিরোধে মিটিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা, ঢাকা জেলা শাখা এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথসভা করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি নতুন করে গঠনসহ দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

কাদের বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন শাখার সম্মেলন, সহযোগী সংগঠনের প্রত্যকের অসমাপ্ত সম্মেলন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় বিলম্বসহ সাংগঠনিক সমস্যার সমাধান করা জরুরি। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা সব শাখার নেতাদের ঢাকায় ডেকে বসতে পারেন। সমস্যা ও বিরোধ থাকলে তা সমাধানে অবিলম্বে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা, ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টির বেশি জেলা-উপজেলায় কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও যথাসময়ে সম্মেলন হয়নি। ২৭টি জেলা ও মহানগরে কোন্দল বা বিরোধ রয়েছে। আর ১৮টি জেলা ও মহানগরে সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নির্বাচনের আগে ৬৯ জেলা এবং ৩৫০টির বেশি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। এসব জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি ৪-৫টির মতো জেলায়। উপজেলার সংখ্যা কিছুটা বেশি হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। সব সময়ই গোছালো থাকে। কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সম্মেলন হয়। কিছু জেলা, উপজেলা, মহানগর ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি সময়মতো, কিছুতে সম্মেলন হলেও কমিটি করা হয়নি আর কিছু কমিটি অপূর্ণাঙ্গ রয়েছে। এসব সম্মেলন, কমিটি দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

‘দলকে নতুন করে সংগঠিত করা হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, সেখানকার নেতাদের ঢাকায় ডেকে বা এলাকায় গিয়ে তা সমাধান করা হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এই প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে।’

এছাড়া আওয়ামী লীগের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। উভয় কমিটির আওতাধীন ওয়ার্ড ও থানাগুলোর সম্মেলন হলেও দেওয়া হয়নি কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপের কারণে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি দিতে বিলম্ব হচ্ছে, নগর কমিটির সম্মেলনও ঝুলে গেছে। ফলে নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকার্মীদের প্রশ্ন, কবে নতুন নেতৃত্ব পাবেন তারা।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। ওই দিন উভয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চার জনের নাম ঘোষণা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয় প্রায় এক বছর পর, ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বরে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত হয়নি। এর আগে ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এর তিন বছর পর দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়, ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল হয় আলাদা কমিটি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে ২৪টি থানা, ৭৫টি ওয়ার্ড, ৫টি ইউনিয়ন এবং ৪০০টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিটগুলোতে প্রথমবারের মতো সম্মেলন করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। তবে সম্মেলন হলেও কোনও ওয়ার্ড ও থানায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। দক্ষিণের চেয়েও খারাপ অবস্থা ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের। এর অধীনে থাকা ৮০২টি ইউনিট, একটি ইউনিয়ন, ৬৪টি ওয়ার্ড ও ২৬টি থানায় সম্মেলন হলেও কোথাও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সম্মেলনে আগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় ৪৫ দিনের মধ্য নতুন কমিটি ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনও কারণে সেটি সম্ভব না হলে কেন্দ্রের কাছে কারণ ব্যাখ্যা করে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে হয়, সেটাও করেননি নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। সম্মেলন হওয়ার পর কোথাও বছর, কোথাও মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি দেওয়া হয়নি এখনও। ফলে বিলুপ্ত কমিটিগুলো নেতৃত্বশূন্য রয়েছে অনেকদিন ধরে। কবে নাগাদ নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে, সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছেন না নগর নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। সব সময়ই গোছালো থাকে। কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সম্মেলন হয়। কিছু জেলা, উপজেলা, মহানগর ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি সময়মতো, কিছুতে সম্মেলন হলেও কমিটি করা হয়নি আর কিছু কমিটি অপূর্ণাঙ্গ রয়েছে। এসব সম্মেলন, কমিটি দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

‘দলকে নতুন করে সংগঠিত করা হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, সেখানকার নেতাদের ঢাকায় ডেকে বা এলাকায় গিয়ে তা সমাধান করা হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এই প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের মহানগরের সম্মেলন আগেই হয়ে গেছে। থানাগুলোর সম্মেলনও হয়েছে। এখন কেবল কমিটি দেওয়া বাকি আছে। প্রস্তাবিত নামও জমা দেওয়া আছে, নেত্রী অনুমোদন করলেই ঘোষণা করা হবে। আগামী মার্চের শেষ দিকে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে আমার ধারণা।’

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুনে আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও মহানগর সম্মেলনগুলো দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে সম্মেলন হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়া জেলাগুলোর কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।