প্রক্টর ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরোজ সাদাফ অবন্তিকা। শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত সোয়া ১০টার দিকে তাকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তার মৃত্যুর বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা জেনারেল হাসপালের আবাসিক সার্জন ডা. আব্দুল করিম খন্দকার।

নিহত ফাইরোজ কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রয়াত জামাল উদ্দিনের মেয়ে। কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস পুকুরপাড়ের নিজ ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আত্মহত্যার আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে ফাইরোজ অবন্তিকা লেখেন, “আমি যদি কখনও সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী। আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের) সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে, যে আমাকে বহিষ্কার করা উনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনও জাস্টিস পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজিং কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনও আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎ সাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে বলে, ‘… তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলছস কেনও? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি কে বাঁচাবে?’

আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিকাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তে থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সো কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না।

আমি উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনও সলিউশন না, কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনও গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।’

কুমিল্লা জেনারেল হাসপালের আবাসিক সার্জন ডা. আব্দুল করিম খন্দকার বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসক তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন। এরপরও স্বজনদের আকুতির কারণে তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে বাংলা ট্রিবিউনের জগন্নাথ প্রতিনিধি জানান, ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাতে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রাত্রিকালীন দায়িত্বে থাকা ডাক্তার জুবায়ের তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার গলায় একটি দাগ (রশ্মি) দেখতে পারি এবং তার দেহ নিথর অবস্থায় ছিল। আমরা মৃত অবস্থায় তাকে পেয়েছি। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর পূ্র্বের ঘটনা নিয়ে অবগত ছিলাম না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সে যদি আসতো তাহলে ভিসি ম্যামের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতাম। বিষয়টি নিয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অফিস খুললে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তাদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে একটি প্রক্টরিয়াল টিম কুমিল্লাতে পাঠাচ্ছি। তারা আর কিছুক্ষণের মধ্যে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।’