অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অহিংস রাজনীতি করার সুপারিশ

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে গুণগত মান রক্ষা করা হয়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনডিআই, আইআরআই তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করতে হলে সব পক্ষকে অহিংস রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়া সুপারিশ করেছে তারা।

শনিবার (১৭ মার্চ) প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগত মান ক্ষুণ্ন হয়েছে যেসব ঘটনার কারণে তা হলো রাষ্ট্র, শাসক দল ও বিরোধীদের সহিংসতা। সেই সঙ্গে প্রাকনির্বাচনের পরিবেশ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় শূন্য-সমষ্টির রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন, বাকস্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার অবনতি।

নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশে অবস্থানকালে স্বীকৃত পাঁচজন দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষক নির্বাচন ও সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মী, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের সংগঠনসহ যুবক, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এটি একটি যৌথ প্রাক-নির্বাচনি মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) অনুসরণ করে, যা এনডিআই এবং আইআরআই ২০২৩ সালের ৮ থেকে ১১ অক্টোবর পরিচালনা করেছিল। পিইএএমের পর্যবেক্ষণে কারিগরি মূল্যায়নের কাঠামো ও পরিধি সম্পর্কে অবহিত করা হয়, যা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এবং ২০০৫ সালে জাতিসংঘে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নীতিমালার ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনি সহিংসতার বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনে সহিংসতার ঝুঁকি প্রশমন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইআরআই এবং এনডিআইয়ের তুলনামূলক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারের নির্বাহী ও আইন বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্য অংশীজনদের কাছে সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নির্বাচনি সহিংসতা
নির্বাচনের আগে ও পরে সম্ভাব্য নির্বাচনী সহিংসতা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ওই টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশনকে (টিএএম) বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনে সহিংসতা না হওয়ায় কিছুটা অবাক হয়েছিল ওই টিম এবং এ কারণে তাদের প্রতিবেদন প্রদানে প্রায় এক মাস দেরি হয়। ধারণা করা হয়েছিল নির্বাচনের ছয় সপ্তাহের মধ্যে তারা তাদের প্রতিবেদন দেবে।

নির্বাচনি সহিংতা নিয়ে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘মিশন সদস্যরা অবগত হয়েছেন যে ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়কাল, প্রচারের সময়কাল, নির্বাচনের দিনসহ অন্যান্য সময়ে, পূর্ববর্তী নির্বাচন চক্রের তুলনায় শারীরিক ও অনলাইন সহিংসতা কম হয়েছে। এটি হয়েছে প্রাথমিকভাবে দেশব্যাপী কার্যকর নির্বাচনি প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতির কারণে এবং দেশের নিরাপত্তায় সরকারের বাড়তি নজর দেওয়ায়।

অহিংস রাজনীতি
নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করতে হলে সব পক্ষকে অহিংস রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়া সুপারিশ করেছে।

আইআরআইয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করতে হলে সব পক্ষকে অহিংস রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।

এনডিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ বলেন, এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতে আরও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য একটি মূল্যবান রোডম্যাপ হিসেবে অবদান রাখবে। অহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নাগরিক সমাজসহ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলজুড়ে নেতাদের নির্বাচনি রাজনীতির নিয়ম, অনুশীলন ও নিয়মগুলোর সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে।

আইআরআই এবং এনডিআই হলো নির্দলীয়, বেসরকারি সংস্থা, যা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অনুশীলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৩০ বছরে ৫০টিরও বেশি দেশে সম্মিলিতভাবে ২০০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।